অবশেষে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও নাজমা হত্যা মামলার প্রধান আসামী ফারুক সরকার আব্বাসীকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত বুধবার(৩১মার্চ) বিকেলে ঢাকার হাজারীবাগ থানার পূর্ব রায়েরবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।কুমিল্লার মেঘনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারের পর আজ বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে আব্বাসীকে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজ বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল দুটি মামলায় ওই চেয়ারম্যান উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিনে রয়েছেন।তবে বাদীপক্ষ ওই জামিন বাতিলের জন্য আপিল করে।এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই চেয়ারম্যানের অস্ত্র মামলার আগাম জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এরপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত দু’দিন আমরা তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখি।গত বুধবার নিশ্চিত হই, অস্ত্র মামলায় তাকে উচ্চ আদালতের দেওয়া আগাম জামিনটি স্থগিত করা হয়েছে। এরপর অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার মধ্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ফারুক আব্বাসী।১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে খুন হন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী।২৩ বছর আগে তরুণ বয়সে ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন আব্বাসী।ওই মামলার অভিযোগপত্রে ফারুক আব্বাসীর নাম রয়েছে দুই নম্বরে।
ওই মামলায় গ্রেফতারের পর কিছুদিন কারাগারে ছিলেন তিনি।জামিনে বেরিয়ে আব্বাসী ফিরে আসেন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার নিজ বাড়ি ভাওরখোলা গ্রামে। আর এখানেই গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী।২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো ভাওরখোলা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর সরকার পরিবর্তন হলে তিনি আওয়ামী লীগের এলাকার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন।২০১৬ সালে ভাওরখোলা ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে চেয়ারম্যান হন।
২০১৬ সালের ওই ইউপি নির্বাচনে আব্বাসীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হন একই গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আব্বাসী বাহিনীর অত্যাচারে সপরিবার এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন সিরাজুল।আর গ্রামে আসেননি। চাচাতো ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত মাসে সপরিবার গ্রামে এসেছিলেন সিরাজুল। এ খবর পেয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আব্বাসী তাঁর বাহিনী নিয়ে সিরাজুল ইসলামের বড় ভাই আবদুস সালামের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় আব্বাসীর লোকজন নারী-পুরুষ যাকে যেখানে পেয়েছে, পিটিয়ে–কুপিয়ে জখম করেছে।ওই হামলায় নিহত হন সিরাজুলের ভাবি নাজমা বেগম (৫০)।সিরাজুলের ভাই আবদুস সালামসহ ৬জন গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনার পরদিন ফারুক আব্বাসীকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের দেবর সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই হত্যাকাণ্ডের দিন তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আব্বাসীকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করেন মেঘনা থানার এসআই নাজিম উদ্দিন।
বুধবার (৩১ মার্চ) ওই অস্ত্র মামলায় কুমিল্লা জেলা ও মেঘনা থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে ফারুক আব্বাসীকে গ্রেফতার করেন।
Last Updated on April 1, 2021 8:32 pm by প্রতি সময়