অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে মেঘনাপাড়ে মানববন্ধন #
বিধিনিষেধ ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে বিলীন হচ্ছে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম। নিজেদের শেষ সহায় সম্বল রক্ষায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবীতে অবশেষে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মেঘনা পাড়ের মানুষ।
মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পাড়ে বসবাস করা মানুষগুলোকে হুমকির মুখে ফেলছে প্রভাবশালী এক ইজারাদার। বিধিনিষেধ অমান্য করে নিজেদের বাড়িঘরের কাছাকাছি স্থানে বালু উত্তোলনের এ যন্ত্রণা ভিটামাটি হারানো অসহায় নারী-পুরুষরা আর সইতে পারছে না। তাদের চোখেমুখে একসময় সব থাকার সেই হাসি নেই।
অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন দিনে দিনে এ মানুষগুলোকে নি:স্ব হবার মানসিক যন্ত্রণায় ফেলছে। বাড়ির সামনে নদীতে ড্রেজারের শব্দ শুনে পাড়ে এসে বাধা দেওয়ার সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছে নদীর পাড়ের সাধারণ মানুষগুলো। আগে যা নদীগর্ভে চলে গেছে তা নিয়ে আপসোস আছে ঠিকই, কিন্তু যেটুকু আছে তা কি হারাতে হবে ? এমন দুশ্চিন্তা তাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
অবশিষ্ট জমি ও ভিটাবাড়ির অংশ রক্ষা ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকালে মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদের চর গ্রামের নদীর পাড়ের কয়েকশ নারী-পুরুষ প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনে আসা রামপ্রসাদের চরের খোরশেদা বেগম, মিনারা বেগম, ফাতেমা বেগম, কামরুন্নেছা, শেফালী বেগম, ইদ্রিস আলী, ঢাবি ছাত্র শামীম শাওন, শিমুলসহ এলাকাবাসী জানান, নদীর শেনারচর অংশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপ্রসাদের চর, নলচরসহ অনেক গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে। অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়েছেন বলেও জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান #
গ্রামের মানুষদের এসব কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও গণ্যমন্য লোকজন। মানববন্ধন কর্মসূচির আগে চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফের সভাপতিত্বে রামপ্রসাদের চর এলাকায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন, রইস উদ্দিন মুকুল প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত গ্রামবাসীর একাংশ #
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারি আশরাফ উদ্দিন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে মাহবুব, কাইয়ুম, হুমায়ুনসহ ইজারাদারের অন্যান্য লোকজন নদীর ভাসানিয়া দড়িচর এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা নিয়ে সেখান থেকে বালু উত্তোলন না করে শেনারচর অংশের নলচর, রামপ্রাসাদেরচর, মৈশারচরসহ আশপাশের এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে ওইসব এলাকার শত শত মানুষের বাড়িঘরসহ ভিটেমাটি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু সহায় সম্বল রয়েছে তাও ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের ইজারার লোকজন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে হুমকির মুখে ফেলছে।
নদীর পাড়ে শেষ সম্বলটুকু থাকবে তো ?
এদিকে মানববন্ধন শেষে ভিটেমাটি হারানো অনেককে নদীর পাড়ে বসে কাঁদতে থাকেন। কেউ নদীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলেন। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেছেন-নিষেধাজ্ঞা স্থানসহ তাদের বাড়িঘরের কাছাকাছি জায়গা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক। যারা এসব করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়া হোক।
মেঘনা থানার ওসি আবদুল মজিদ বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy news ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on November 6, 2020 7:02 pm by প্রতি সময়