কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বলেছেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু সতাতার প্রশ্নে কখনো আপোষ করেননি।আজ অসৎ রাজনীতিবিদদের কারণে সৎ রাজনীতিবিদরা প্রশ্নবিদ্ধ।অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না।অসৎ সাংবাদিকরা সারা জাতিকে জিম্মি করতে চাইছে। তাদের কারণে সৎ সাংবাদিকরাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবতন ঘটাতে হবে। সততা ও ন্যায়ের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
রবিবার (৩ জানুয়ারি) মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে কুমিল্লা বার্ডে লালমাই-ময়নামতি প্রকল্পের উদ্যোগে “দারিদ্র্য হ্রাসকরণে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা : বর্তমান চিত্র ও সাফল্যগাঁথা” শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনার এবং প্রকল্পের সুফলভোগীদের মাঝে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট মো: আমিনুল ইসলাম টুটুল। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বার্ডের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো: শাহজাহান।
বঙ্গবন্ধুর মতো মাথা উচুঁ করা সাহসী রাজনীতিবিদ বিশ্বের ইতিহাসে আরেকজন খুঁজে পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে এমপি হাজী বাহার আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধ যখন চলছিল তখন বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কারাগারের কনডেম সেলের পাশের কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তাদের বলেছিলেন আমাকে যদি তোমরা হত্যা কর, তাহলে লাশটা আমার বাংলার মানুষের কাছে পাঠিয়ে দিও। ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে গেলেন। ৯ জানুয়ারি সেখানে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের স্বীকৃতি চেয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা একসময় আমাদের দেশের অনেক সম্পদ নিয়ে এসেছ,এখন আমাদের ফিরিয়ে দাও, সাহায্য কর। জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে বাংলায় ভাষন দিয়ে বাঙ্গালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলার মানুষ যেন বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বুলেট ট্রেনের গতিতে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় এদেশের শ্রমজীবি মানুষ গামছা পড়ে জীবন কাটাত এখন আমাদের কৃষকদের সেই অবস্থা নেই। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে একজন কৃষি শ্রমিক যখন কুমিল্লায় কাজ করতে আসে তখন সে জিন্সের প্যান্ট পড়ে আসে। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের ভাগ্যে ও পরিবতন দেখতে চেয়েছিলেন। কৃষকের ছেলে এখন আর কৃষক হয় না,কাজের ভুয়ার মেয়ে কাজের বুয়া হয় না। কৃষকের ছেলে, কাজের বুয়ার ছেলে আজ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে।এই স্বপ্নই তো বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা সব সময়েরই যোদ্ধা। ৭১ সালে যুদ্ধ করেছি দেশের স্বাধীনতার জন্য, এখন যুদ্ধ করছি দেশ গঠনের জন্য। আমি একজন বঙ্গবন্ধুর আদশের শেখ হাসিনার কমী। দীঘ ২৩ বছর দলে পদ বঞ্চিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর আদশ থেকে বিচ্যুত হয়নি। বিএনপি-জাতীয় পাটির আমলে মন্ত্রীত্বের অপার এসেছিল, প্রত্যাখান করেছি। অন্যদলের মন্ত্রীর চেয়ে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর আদশের কমী হওয়া অনেক সম্মানের, অনেক মযাদার।
বার্ড প্রসঙ্গে হাজী বাহার এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা নামের যে রাষ্ট্রচিন্তা করতেন তার কেন্দ্রে ছিল সাধারণ মানুষ ও তাদের কল্যাণ। জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)। আমাদের বার্ড থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন হয়েছে কোরিয়া। জাপান সহ বিশে^র বহু দেশের মানুষ আমাদের বার্ড থেকে প্রশিক্ষন নিয়েছে। মাঝখানে বার্ড এর সেই কাযক্রম থেমে গেছে । নতুনভাবে বার্ডকে সাজাতে হবে। বার্ডের হারানো গৌরব ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বার্ডের মহাপরিচালক মো: শাহজাহান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)। গ্রামীন জনগোষ্টির জীবন যাত্রার মান বাড়াতে বার্ডের মাধ্যেমে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ ও প্রশিক্ষন বাড়াতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আদশ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এড.মো.আমিনুল ইসলাম টুটুল বলেন, মানুষের অথনৈতিক পরিবতন এসেছে। এখন মানসিকতার পরিবতন ঘটাতে হবে। উন্নত মানসিকতা মানুষ না হলে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব নয়। লালমাই-ময়নামতি প্রকল্পের মেয়াদ ও পরিধি বাড়িয়ে লালমাই-ময়নামতি-গোমতী নামে প্রকল্প নামকরণের দাবী জানান।
সেমিনার পরবর্তী অধিবেশনে লালমাই ময়নামতি প্রকল্পের ৮০ জন সুফলভোগীর প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ২০ লক্ষ টাকার বিশেষ ঋণ প্রদান করা হয়েছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাডের যুগ্ম পরিচালক সালাহ উদ্দিন ইবনে সাঈদ । সেমিনার পরিচালনা করেন ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা, যুগ্ম পরিচালক, বার্ড ও লালমাই-ময়নামতি প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও আনাস আল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, বার্ড।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিগত ছয় দশক ধরে প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে গ্রাম উন্নয়নের টেকসই মডেল উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৬ সাল হতে বার্ড “সমন্বিত কৃষি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ি এলাকার জনগণের জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে আসছে। লালমাই ময়নামতি প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ২৯৭টি গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন সৃজন করা হয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজার ৬০৩ জন। প্রকল্পের পুঞ্জিভূত পুঁজির পরিমান ১৪ কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ২৫২ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯ জনকে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা সাধারণ ঋণ এবং ২ হাজার ৮৫০ জনকে ২৫ হাজার টাকার করে ৭ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিশেষ ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
Last Updated on January 3, 2021 8:58 pm by প্রতি সময়