# প্রতীকী ছবি।
আজ ৮ডিসেম্বর। কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুমিল্লা পাকস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। সেদিন জয়ের উল্লাসে বাঁধভাঙ্গা জোঁয়ার সৃষ্টি হয় কুমিল্লার আপামর জনগণের মাঝে। জয়বাংলা শ্লোগানে মেতে উঠে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ। নবচেতনায় দীপ্ত কুমিল্লাবাসীর চোখের মণিতে ভেসে উঠে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের মানচিত্র খঁচিত পতাকা। ৮ডিসেম্বরের রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে এতিহাসিক কুমিল্লা টাউনহল মাঠে পতপত করে আনুষ্ঠানিকভাবে উড়ানো হয়েছিল বহুকাঙ্খিত লাল সবুজের পতাকা।
১৯৭১ সালের ৫ডিসেম্বর সকালে ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নবম বেঙ্গল কুমিল্লা শহরতলীর বালুতুপা এলাকায় এসে অপেক্ষা করতে থাকে। বালুতুপা থেকে ৮ মাইল দূরে পাকসেনা ব্যাংকার ডিফেন্স নিয়েছিল। নবম বেঙ্গলের সৈন্যরা পাকসেনাদের পেছন দিক দিয়ে ৬ডিসেম্বর কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে। ওইরাতে যৌথবাহিনী তিনদিক থেকে কুমিল্লা বিমানবন্দরে হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর আক্রমন করে। পাকসেনাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় সেখানে। পাকসেনারা বিমানবন্দর ছেড়ে পালিয়ে ময়নামতি সেনানিবাসে চলে যেতে বাধ্য হয়।
পরদিন বিকেলে জেনারেল অরোরা হেলিকপ্টারযোগে কুমিল্লা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনকে শহরের আইন শৃংখলা আয়ত্বে আনার দায়িত্ব দিয়ে পুনরায় ফিরে যান। এদিকে কুমিল্লা প্রশাসনে সম্পূর্ণ শূণ্যতা দেখা দিলে বিষয়টি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের আগরতলা অফিস অবহিত হওয়ার পর পূর্বাঞ্চল প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর পূর্বাঞ্চল যুব শিবিরের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আহাম্মদ আলীকে বৃহত্তর কুমিল্লার প্রশাসনিক চীফের দায়িত্ব দিয়ে পূর্বাঞ্চল প্রশাসনিক অফিসার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদকে জেলা প্রশাসক ও সিআর দত্তকে পুলিশ সুপার হিসেবে কুমিল্লায় বদলীর আদেশ দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ৮ডিসেম্বর সকালে কুমিল্লা শহরের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শহরে প্রবেশ করে। আনন্দে উদ্বেলিত জনগণ বীর যোদ্ধাদের ফুল দিয়ে স্বাধীনতার অভিবাদন জানায়।
ওইদিন বিকেলে যৌথবাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার বাকসী, প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের এসকট করে কুমিল্লা বিমানবন্দরে পৌঁছেন। সেখান থেকে তারা ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে বিকালে কুমিল্লা টাউনহলে আসেন। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন পূর্বাঞ্চল যুব শিবিরের পরিচালক প্রশিক্ষক ড: হাবিবুর রহমান, আবদুল আজিজ খান এমপি, আবদুর রশিদ ইঞ্জিনিয়ার এমপিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
টাউনহল মাঠে হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতার বিজয় উল্লাস আর জয়বাংলা ধ্বনীতে মুখরিত হয়ে ওঠে। তারপর কুমিল্লার প্রশাসনিক চীফ হিসেবে অ্যাডভোকেট আহাম্মদ আলী স্বাধীন বাংলার জাতীয় পতাকা এবং জহুর আহমেদ চৌধুরীর হাত ধরে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে কুমিল্লাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে একমাত্র কুমিল্লাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে।সেইদিক থেকে কুমিল্লা মুক্তদিবস বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আসছে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন ভিডিও নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on December 8, 2020 8:46 am by প্রতি সময়