আদালতের বারান্দা, চায়ের দোকান কিংবা আদালত চত্বরের সবুজ ঘাসের ওপর বসে আর বিশ্রাম নিতে হবে না বিচারপ্রার্থী লোকজনের। আদালতে বসে বিশ্রাম নেওয়ার ভালো কোন অবকাঠামো না থাকায় যুগ যুগ ধরে বিচারপ্রার্থী লোকজনের বিশ্রামের জায়গা হয়ে ওঠেছিল ওই স্থানগুলো। অবশেষে অত্যাধুনিক মানের বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণ হবে কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গণে। আর এখানেই কমপক্ষে একসঙ্গে একশ জনের বসার উপযোগী বিশ্রামাগার হচ্ছে। ন্যায়কুঞ্জ নামে অত্যাধুনিক বিশ্রামাগারে থাকবে শৌচাগার, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও স্ন্যাকস কর্ণার।
বুধবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীগণের জন্য এক হাজার বর্গফুটের বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট আপীল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান। এসময় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আদালতে বিচারপ্রার্থী মানুষরা এলে অনেকক্ষণ থাকতে হয়। কিন্ত তাদের বসা বা বিশ্রাম নেওয়ার মতো ভালো কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এই বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি অনুধাবন করে দেশের প্রতিটি আদালত চত্বরে ন্যায়কুঞ্জ নামে বিশ্রামাগার স্থাপনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবটি গ্রহণ করে একনেকের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়ার পর দেশের ৬৪ জেলায় ন্যায়কুঞ্জ স্থাপনের জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। যার কার্যক্রম চলছে।গত বছরের আগষ্টে গত বছরের আগস্টে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের জন্য ‘ন্যায়কুঞ্জ’ উদ্বোধন করেন। কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গনে ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণ হওয়ার পর এটির যতেœ যাতে কোনরকম অবহেলা না হয়।এখানে কেবল বিচারপ্রার্থী লোকজন বিশ্রাম নেবেন। এখানে বাইরের লোকজন, আদালতের মুহুরীরা বসে যাতে পরিবেশ নষ্ট না করে এব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।এই ন্যায়কুঞ্জ বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করবে।
বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান আরও বলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের একটি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ন্যায়কুঞ্জ’র পাশাপাশি আদালতে মামলা সংক্রান্ত কাজে আসা সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, ডাক্তারদের জন্য আরেকটি বিশ্রামাগার করার ব্যাপারে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে বিষয়টির প্রস্তাব করবো। যাতে করে এই প্রকল্পটির সাথে যুক্ত করে আরেকটু জায়গা বাড়িয়ে আরেকটি বিশ্রামাগার করা যায়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) জাহিদুল কবির, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৩ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোয়াজ্জেম হোসেন, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোসাঃ মরিয়ম মুন মুঞ্জুরী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুল্লাহ আল মামুন, শ্রম আদালত চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) হাবিবুর রহমান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপীল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার শেখ মো. আমীনুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা জেলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজল হোসেন, কুমিল্লা বারের সভাপতি আহসান উল্লাহ খন্দকার, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর রাসেদুল করিম।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এফ এম শেফায়েত ছালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইনাঙ্গনের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সরকারি কৌসুলি অ্যাডভোকেট তপন বিহারী নাগ,পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম, সাবেক পিপি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, কুমিল্লা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু তাহের ও প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান শেষে বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুজ্জামান আদালত চত্বরে একটি নিম গাছের চারা রোপন করেন। পরে তিনি কুমিল্লা বার মিলনায়তনে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন।
Last Updated on June 7, 2023 10:03 pm by প্রতি সময়