মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সব মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই আমাদের চলাফেরা করতে হয়। মোটকথা আমরা সমাজবদ্ধভাবে বাস করি। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে মানুষ একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াদা করে। যখন কোনো ওয়াদা করা হয়, তখন তা মুমিন ব্যক্তির জন্য পালন করা আবশ্যক হয়ে যায়। কারণ মুমিনের জীবনে ওয়াদা পালন করার গুরুত্ব অপরিসীম। আর যারা ওয়াদা পালন করে না, তারা সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, কারো সঙ্গে কোনো বিষয় ওয়াদাবদ্ধ হলে তা পালনে হেলাফেলা করা ঈমানদারের পরিচয় নয়। ওয়াদা রক্ষা করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ।
বৈধভাবে যার সাথেই ওয়াদা করা হোক না কেন তা রক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের যাপিত জীবনে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পারিবারিক জীবনেও ওয়াদা রক্ষার্থে আমরা বে-খবর।
এজন্যই ওয়াদাকারীদের হুঁশিয়ারি করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা ওয়াদা পালন করো। নিশ্চয়ই ওয়াদা সম্পর্কে (তোমাদের) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত-৩৪)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ,তোমরা কেন এমন কথা বলো! যা কাজে পরিণত করো না, এটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ যে তোমরা বলবে এমন কথা যা করবে না।’ (সুরা সফ, আয়াত-২,৩)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘তোমরা যদি কোনো সমপ্রদায়ের পক্ষ থেকে (চুক্তি ভঙ্গজনিত) বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করো, তাহলে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথ (ঘোষণা দিয়ে) বাতিল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত-৫৮)।
ওয়াদা পালনে রয়েছে প্রভুর সন্তুষ্টি। যে সন্তুষ্টি মানবজীবনে এনে দেয় সুখ-শান্তি। ওয়াদা পালনকারীর প্রতি ঝরতে থাকে প্রভুর অফুরন্ত রহমতের বারিধারা। ওয়াদা পালন করা মুমিনের নিদর্শন। যে পালন করে না সে মুনাফিক।
আর মুনাফিকের আলামত বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি।
এক. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। দুই. যখন ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে। তিন. তার কাছে যখন আমানত রাখা হয় সে তার খিয়ানত করে।’ (সহিহ বুখারি)।
অন্য আরেক হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য অথবা তার ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করবে, আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এমন অবস্থায় ঘটবে যে, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন।
এ কথার সত্যতার জন্য আল্লাহ তায়ালা অবতীর্ণ করেন, ‘যারা ওয়াদা ও কসম সামান্য মূল্যে বিক্রি করে দেয়, পরকালে তাদের জন্য কোনো অংশই থাকবে না, সেদিন এদের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কোনো কথা বলবেন না, আল্লাহ তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না এবং আল্লাহ তাদের পবিত্রও করবেন না, এদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত-৭৭, সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৬৫৯)।
কেয়ামতের দিন যদি আল্লাহ তায়ালা কারো ওপর নাখোশ হয়ে যান, তাকে সাহায্য করার মতো কেউ থাকবে না। ওই ব্যক্তিকে নিশ্চিত জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মতো মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : চেয়ারম্যান, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন কুমিল্লা।
Last Updated on October 6, 2023 2:25 pm by প্রতি সময়