মৃত্যু সকল জীবের জন্য অপরিহার্য। মানুষের মৃত্যু হলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নানা নিয়মে মৃত ব্যক্তির চির বিদায়ের ব্যবস্থা করে থাকেন। মুসলমানদের দেওয়া হয় কবর। কবর দেওয়ার প্রথা হযরত আদম আঃ থেকে মুসলিম সমাজে চলে আসছে। মানুষ মারা যাওয়ার পর করব দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কাজ করব খোঁড়া। আর এই কবর খোঁড়ার কাজ করে থাকে গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা। এ কাজ তাঁরা করে পরম মমতায়। কারণ এই ঘর তাঁর শেষ ঠিকানা। তেমনই একজন কবর খোঁড়ার নিপুন কারিগর মনসুর আলী। তিনি মেহেরপুরের মুজিবনগরে বিশ্বনাথপুর গ্রামে ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পেশার তাগিতে কৃষি কাজ করে থাকেন।
মনসুর আলীর কাছে থেকে জানা যায়, তিনি তার ৬৫ বছরের জীবনে একাধারে গ্রামের অনেক মানুষের কবর খোঁড়া সহ মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়ার সকল কাজ করে এসেছেন। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি একজন মহান ব্যক্তিত্ব। গ্রামের যখনই কেউ মৃত্যু বরণ করেন খবর পাবার সাথে সাথেই তিনি তার সকল কাজ ফেলে রেখে কবর খোঁড়া, বাঁশ কাটা সহ মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতে যে যে কাজ গুলো করতে হয় তা তিনি সবই করে থাকেন।
তিনি আরো বলেন যে, তিনি মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া সহ সকল কাজ করতে পারায় তার কাছে অনেক ভাল লাগে। গ্রামে কেউ মারা যাওয়ার খবর শুনলেই তিনি আগ্রহে মৃত ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে সকল কাজ তাড়াতাড়ি করার জন্য বলেন এবং কবরস্থানে গিয়ে কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেন।
মনসুর আলীর মাধ্যমে আরো জানা যায়, মনসুর আলী আজ বয়োবৃদ্ধ তাই গত ৬ মাস আগে থেকে কবর খোঁড়ার কাজটি আর করেন না। বার্ধক্য আসায় এই কাজ করার জন্য শরীরে আর তেমন শক্তি পায় না। বিভিন্ন সময় শরীরে নানান ব্যাধী হওয়ায় তিনি আর কবর খোঁড়ার কাজ করতেন পারছেন না। তবে তিনি তার বড় মোঃ লাল্টুকে মৃত ব্যক্তির কবর দেওয়ার সকল কাজ শিখিয়ে দিয়েছেন। এতে করে কোনো মৃত ব্যক্তির কবর খোঁড়ার জন্য মনসুর আলীর ডাক হলে তার ছেলে লাল্টুকে পাঠিয়ে দেই। লাল্টু তার বাবার কৃতিত্ব ধরে রাখতে নিষ্ঠার সাথে কবর খোঁড়ার সকল কাজ সঠিক ভাবে করে থাকেন।
‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মতাদর্শের উপর বিশ্বাস রেখে সমাজের একজন আরেক জনের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তেমনই মৃত ব্যক্তিদের সঠিক নিয়মানুসারে কবর দেওয়া একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য। এদেশে কবর খোঁড়ার সুদীর্ঘ ইতিহাস টিকে থাকবে মনসুর আলীদের হাত ধরেই।
Last Updated on July 30, 2020 4:07 am by প্রতি সময়