দারুন বিধ্বংসী নোভেল করোনাভাইরাস অথবা কোভিড-১৯ এর বিষাক্ত ছোবলে ইতিমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশেও মৃত্যু সংখ্যা ১০জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত ২২৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালেও হচ্ছেনা স্থান সংকুলান।
সারা পৃথিবী আজ প্রানঘাতি মহামারীতে আক্রান্ত। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস আঘাত হেনেছিল ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ ৬মাস হয়ে গেল আর আমাদের দেশে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ ২০২০। ইতিমধ্যে আমরা একে নোভেল করোনাভাইরাস অথবা কোভিড-১৯ নামে চিনেছি।
চীন থেকে যাত্রা শুরু করে এটি একে একে পৃথিবীর ২১৩ টি দেশ ও অঞ্চলে তার থাবা বিস্তার করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে আক্রান্তের সংখ্যা আর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় পাঁচলাখ পেড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশেও মৃত্যু সংখ্যা২২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
মৃতদের বয়সের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ৫০ বছরের বেশী বয়সী ব্যক্তিরাই সংখ্যায় বেশী মৃত্যুবরণ করছেন। অর্থাৎ বয়স্করা বেশী মারা যায়। আর বয়স্কদের বেশী হারে মারা যাওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে কো-মরবিডিটি অর্থাৎ যাদের শরীরে আগে থেকেই বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাধি বাসা বেধে আছে তারাই মৃত্যুবরণ করছে বেশী।
এই সকল কো-মরবিড বা সহযোগী অন্তর্নিহিত রোগের অবস্থা বিশ্লেষণে দেখা যায় হৃদরোগ শতকরা ১৩ ভাগের বেশী, শতকরা ৯ ভাগের বেশী ডায়াবেটিস ও দীর্ঘমেয়াদী ফুসফুসের রোগ, উচ্চরক্তচাপ এবং ক্যান্সার প্রতিটি শতকরা ৮ ভাগ করে।
সুতরাং আমরা এটা বলতে পারি যে, করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি যারা আগে থেকেই হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদী ফুসফুসের রোগ এবং ক্যান্সারের মতো রোগে ভুগছেনতারাই বেশী হারে মৃত্যুবরণ করছে।
নিউইয়র্ক টাইমস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পৃথিবীতে ১৭০ কোটি মানুষেরই কমপক্ষে একটি এরকম অসুখ আছে যার কারনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের শারীরিক অবস্থা তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যায় এবং ফলশ্রæতিতে মৃত্যুবরণ করে।
সম্প্রতি আমেরিকান এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য অবস্থার লোকেরা কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার এই সমস্ত অন্তর্নিহিত রোগবিহীন শুধুমাত্র কোভিড-১৯ আক্রান্তদের তুলনায় ৬ গুন বেশী এবং মৃত্যুহারও এদের তুলনায় ১২ গুন বেশী।
অনেক সময় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত রোগীরা হার্ট অ্যাটাকের মতো উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আবার অনেক সময় হার্ট ফেইলিউরের রোগীর মতো প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়েও হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে।
সুতরাং যাদের এই ধরনের সহযোগী অন্তর্নিহিত রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী।
আমরা জানি, করোনার এখনও পর্যন্ত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত কোন চিকিৎসা নেই।
ফলে আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর। আমাদের নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে, বাইরে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করতেহবে এবং একে অপরের মধ্যে ৬ ফুট নিরাপদ শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। তেল-চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা বা সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করতে হবে। দুশ্চিন্তা:মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। বাড়িতে বয়স্ক লোকজন থাকলে তাদের প্রতি বিশেষ সতর্ক নজর রাখতে হবে কারণ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী সহযোগী অন্তর্নিহিত রোগ বয়স্কদের মধ্যেই বেশী দেখা যায়।
তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি আমাদের সকলেরই মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। কারণ করোনাযুদ্ধে জয়ী হতে হলে করোনাকে প্রতিরোধই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
## লেখক: হৃদরোগবিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি: হার্ট কেয়ারফাউন্ডেশন, কুমিল্লা
Last Updated on July 10, 2020 2:24 pm by প্রতি সময়