গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে মারা গেছেন লেখক মুশতাক আহমেদ। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি মারা যান। ডিজিটাল নিরাপওা আইনে দায়ের করা মামলায় তিনি কারাগারে আটক ছিলেন।
বিষয়টি জানিয়েছেন ওই কারাগারের জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
কী কারণে ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তবে জেল সুপার কর্মকর্তা গিয়াস জানান, ‘রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে এবং পরে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেলে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।’
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মুশতাক বাংলাদেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা। মুশতাক যুক্তরাজ্যে পড়াশোনারে সুযোগে ফ্রান্সের বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখে দেশে ফেরার পর এক যুগ আগে ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশের প্রথম কুমির খামার করতে নেমেছিলেন। বাংলাদেশ থেকে কুমির রপ্তানি তার হাত দিয়েই শুরু হয়। এ বিষয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি।
ঢাকার লালমাটিয়ার বাসিন্দা মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। সেটি কেন্দ্র করেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।
র্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠন দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পান।
মুশতাক ও কিশোরের পক্ষে বেশ কয়েকবার জামিনের আবেদন হলেও তা আদালতে নামঞ্জুর হয়। মুশতাককে গ্রেফতারের পর পাঠানো হয়েছিল ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে থেকে ওই বছরের ২৪ অগাস্ট তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
Last Updated on February 26, 2021 7:34 pm by প্রতি সময়