বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর কুমিল্লা নগরজুড়ে আবারো সক্রিয় কিশোর গ্যাং বাহিনী। নগরীর পাড়া মহল্লায় আতঙ্কের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিশোর গ্যাং কালচার। কিশোর গ্যাং সদস্যদের আস্ফালন ও অস্ত্রের মহড়ায় উদ্বিগ্ন নগরবাসী।
নতুন বছরের শুরুতেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ২১টির বেশি কিশোর গ্যাং তৎপর রয়েছে। একসময় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে লাঠি, হকিস্টিক থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় তাদের হাতে রয়েছে দেশীয় ছোরা, ছেনি, চায়নিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র। গত আট বছরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে অন্তত ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা নগরীতে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের দিকে কুমিল্লা নগরীতে কিশোর গ্যাং কালচারের তৎপরতা শুরু হয়। নগরীতে রতন গ্রæপ, ঈগল গ্রুপ, ব্ল্যাক ড্রাগন, রেক্স গ্রুপ, সিআর সেভেন, বার্থ ফর ফ্লাইং, রক স্টার, চেক ইন, ডিড বি উইআর, ফ্লাইং ঈগল গ্রুপ, হেপেন গ্রুপ, বিগ বস, ব্ল্যাক ফাইটার, ভিল্লা গ্রুপ, সিভিসি গ্রুপ, আরজিএস গ্রুপ, এক্স প্যারাগন, এলআরএন গ্রুপ, মডার্ন গ্রুপ, ডিস্কো বয়েজ, এক্সসিএমএইচএস গ্রুপসহ ২১টির বেশি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেক গ্রুপে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জনের সদস্য রয়েছে। সেই হিসেবে নগরীতে ৫ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য নিজেদের আধিপত্য জাহির করতে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে সহিংসতায় জড়াচ্ছে।
নতুন বছরের শুরুতে নিজেদের পেশিশক্তি জানান দিয়ে নগরীতে দা, ছেনি, চাপাতি, ছোরা, চায়নিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে আতঙ্ক ছড়ায় রতন গ্রুপ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী কিশোর-তরুণরা কিশোর গ্যাংয়ে যুক্ত হয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত করছে। কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ বিমুখ হওয়া কিশোর-তরুণ। অস্বচ্ছল ও অশিক্ষিত পরিবারেরও রয়েছে অনেকে। কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে এসব কিশোর-তরুণরা নগরীতে আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও মাদক বেচাবিকি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের পর নগরীর বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে অন্তত ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এযাবত কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুনের শিকাররা হলো- গোমতী নদীর পালপাড়া এলাকায় খুন হওয়া শুভ, নগরীর মোগলটুলি এলাকার শিক্ষার্থী আজমাইন আদিল, মডার্ন স্কুলের ছাত্র মুমতাহিন হাসান মিরন, অটোরিকশাচালক শাহজাহান, নগরীর দিশাবন্দ এলাকার শিক্ষার্থী সাজ্জাতুল ইসলাম অনিক, কুমিল্লা অজিত গুহ কলেজের ছাত্র অন্তু, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র শাহজাদা ইসলাম, নগরীর অশোকতলা এলাকার সজীব হোসেন বাবু, নগরীর দক্ষিণ চর্থা বড়পুকুর পাড় এলাকার ফয়সাল ইসলাম, পার্কের সামনে খুনের শিকার শাহাদাত হোসেন, ঠাকুরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আমিন ও কুমিল্লা ইপিজেডের একটি চীনা কোম্পানির কর্মকর্তা খায়রুল বাশার খুন হন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সংলগ্ন রানীর দিঘীর পাড়ে আলোচিত কিশোর গ্যাং রতন গ্রুপের অন্তত ৩০ সদস্য দেশিয় বিভিন্ন অস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি সাজ্জাদুল করিম খান বলেন, নগরীর কিশোর গ্যাং দমনে আমরা জোরালো অভিযান পরিচালনা করছি। তাদের নেপথ্যে কারা রয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে সেসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীকে পুলিশকে যথাযথ তথ্য দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। কিশোর গ্যাংয়ের উপস্থিতি দেখলেই কৌশলে ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠিয়ে সহায়তা করুন। কিশোর গ্যাং দমনে আমরা বদ্ধ পরিকর।
Last Updated on January 13, 2025 2:13 pm by প্রতি সময়