দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র কুমিল্লার বাখরাবাদ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল ও পাইপ লাইনে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় গৃহস্থালি কাজে নাভিশ্বাস ওঠেছে গৃহিনীদের। কুমিল্লায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এরিয়া টু-ডি’র ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৫০ হাজার গৃহস্থালি গ্যাসের গ্রাহক রান্নার কাজে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। প্রায় ৬ বছর ধরে গ্যাসের এই দুর্ভোগে হাঁপিয়ে ওঠেছেন আবাসিক গ্রাহকেরা।
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় শীতের মৌসুমে গ্যাসের এই সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে। গ্যাসের অভাবে রান্না করতে পারছেন না আবাসিক গ্রাহকেরা। কোথাও কোথাও জ্বলছে না রান্নার চুলা, আবার কোথাও কোথাও আগুন থাকলেও তা কোনোরকমে মিটমিট করছে। বিকল্প জ্বালানী হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার ও ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করে বাখরাবাদের বিল পরিশোধের পাশাপাশি প্রতিমাসে বাড়তি খরচ বহন করছেন আবাসিকের গ্রাহকেরা।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ি গ্যাস না পাওয়ায় সঙ্কট কাটছে না, এছাড়া শীতকালে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত আসার আগ থেকেই চলছিল এ সমস্যা। শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস সঙ্কট আরও প্রকট হয়ে ওঠেছে।
কুমিল্লা নগরীর চাঁনপুর, গাংচর, পাঁচথুবি, শুভপুর, চকবাজার, মোগলটুলি, সংরাইশ, নবগ্রাম, নলুয়াপাড়া, সুজানগর, পাথুরিয়াপাড়া, নুরপুর, তেলিকোনা, চর্থা, বাগিচাগাঁও, রেইসকোর্স, রাণীরবাজার, পুলিশ লাইন, বিষ্ণুপুর, ছোটরা, অশোকতলা, কালিয়াজুরি, আশ্রাফপুর, শাকতলা, পুলিশ লাইন, ভাটপাড়া, টমছমব্রীজ, থিরাপুকুর পাড়, রাজাপাড়া, কাজীপাড়া, ঠাকুরপাড়া, গোবিন্দপুর, চৌয়ারা, সুয়াগঞ্জ, ময়নামতি, রামপুর ও সদর দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস না থাকা ও চাপ কমে যাওয়ায় সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠেছে।
বিভিন্ন এলাকার গৃহিনীরা জানান, গ্যাসের চুলায় কখনো আগুনের তিব্রতা মিটমিট, কখনো একেবারে না জ্বলায় সকালের নাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের খাবার রান্নাও গ্যাসের চুলায় উঠে না। রান্নাবান্নার কাজে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। গ্যাস না থাকায় বাড়তি খরচ করে এলপিজি সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করতে হচ্ছে।
আবার অনেক গৃহিনী জানিয়েছেন, দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ কম থাকত। এখন ভোর থেকেই গ্যাস থাকে না। এই শীতের রাতে ভোরের আগে ঘুম থেকে ওঠে রান্নাবান্নার কাজ করাটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সিলিন্ডার গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলায় রান্নাবান্না করতে হচ্ছে। মাসে মাসে গ্যাসের বিল দিতে হচ্ছে, সিলিন্ডারও কিনতে হচ্ছে, আবার ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিলে বাড়তি টাকা যুক্ত হচ্ছে।
কুমিল্লার চাঁপাপুর এলাকায় অবস্থিত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লহ্মীপুর জেলায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। প্রাপ্ত গ্যাসের মাত্র ১৫ শতাংশ পাচ্ছেন ওই ছয় জেলার ৪ লাখ ৮৮ হাজার ২৮টি গৃহস্থালি গ্যাস সংযোগের গ্রাহকেরা। অন্যদিকে প্রাপ্ত গ্যাসের ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ যাচ্ছে ১৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র্রে, ৭ শতাংশ সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে এবং বাকি অংশ কুমিল্লা ইপিজেড, বিসিকসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানা গেছে, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের বিতরণ বিভাগের এরিয়া কোড অনুযায়ি টু-ডি’র আওতায় কুমিল্লা ময়নামতি, আশপাশের ইউনিয়ন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকা, চৌয়ারা, সুয়াগঞ্জ পর্যন্ত ৭৫ হাজার আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৫০ হাজার গ্রাহক বর্তমানে গ্যাস সঙ্কটের শিকার। চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকা ও লাইনে চাপ কমে যাওয়ার এ সঙ্কট যেমন গৃহস্থালিতে, তেমনি হোটেল-রেস্তেরাঁতেও দেখা দিয়েছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার, ইলেকট্রিক চুলার পেছনে প্রতি মাসে বাড়তি খরচে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নাভিশ্বাস ওঠেছে।
গ্যাস সঙ্কটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় আমরা অনেক কম গ্যাস পাচ্ছি। আবার শীতকালে পাইপলাইনে গ্যাস জমে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। এ কারণেও গ্যাসের চাপ কমে যায়। ফলে সমস্যা বেশি হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই শীতে এমন সমস্যা হচ্ছে। আমরা গ্যাসের এ সঙ্কট সমাধানে কাজ করছি। গ্রাহকদের দুর্ভোগ, কষ্ট দূর করার চেষ্টা করছি।’
Last Updated on January 15, 2025 8:12 pm by প্রতি সময়