যে সঙ্গীত বেঁজে উঠলে বাঙ্গালী জাতি সম্মান প্রদর্শন করে সেই সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’….এর রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুমিল্লায় আগমন, অবস্থান ও তাঁর সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে কথামালা শুনালেন কুমিল্লার শিল্প সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গণের বিজ্ঞজনরা। পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি আর নৃত্যনাট্য চন্ডালিকা পরিবেশনায় মধ্য দিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকীর সামগ্রিক আয়োজন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
কুমিল্লায় রবী ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৮ মে, ২৫ বৈশাখ) সকাল সাড়ে ৯টায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ’ ম্যুরালে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ- কুমিল্লা শাখা, নজরুল পরিষদ, কালচারাল কমপ্লেক্স, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র কুমিল্লা, সারেগামাপা কুমিল্লা, নবাব ফয়জুনেচ্ছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা জিলা স্কুল, ফরিদা বিদ্যায়তন, বাংলা সংস্কৃতি বলয়, কুমিল্লা সংসদ, খেলাঘর কুমিল্লা সহ বিভিন্ন সংগঠন। এরপর শিল্পকলা একাডেমিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী ঘিরে তাঁর সাহিত্যকর্ম ও কুমিল্লায় কবির আগমন-অবস্থান নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এসব আয়োজন নতুন প্রজন্মকে আগামীদিনে রবীন্দ্রচর্চা আর কবির প্রতি পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার জায়গাটিতে আরো সাবলীল করে তুলবে বলে মনে করছেন কুমিল্লার সাহিত্যাঙ্গনের বিশিষ্টজনরা।
এদিকে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কজ বড়ুয়া।বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউল ইসলাম, বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক, ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মল্লিকা বিশ্বাস, অধ্যাপক শ্যামল প্রসাদ ভট্টাচার্য ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী।
আলোচনা শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ও জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ শিল্পীদের অংশগ্রহনে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন, আবৃত্তি ও নৃত্যনাট্য চন্ডালিকা পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদ ও আবৃত্তি শিল্পী মাহতাব সোহেল।
এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর বাদুরতলায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কুমিল্লা শাখা। এসময় প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে কবিগুরুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, কুমিল্লা শাখার সদস্যরা। বিশিষ্ট সঙ্গীত প্রশিক্ষক মিতাপালের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আগে সংগঠনের সভাপতি ডা. মল্লিকা বিশ্বাস বলেন, বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটকের বর্ণিল অধ্যায় জুড়ে রয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরু কুমিল্লা শহরে এসেছেন, থেকেছেন। এটা যখন আমরা মনে করি তখন আমরা দারুণভাবে পুলকিত হই। আজকে কবির জন্মবার্ষিকীতে আমরা কবিগুরুকে আমাদের প্রাণের সবটুকু দিয়ে স্মরণ করার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা শহর ও শহরতলীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুইবারের আগমননের মধ্যদিয়ে বেশকিছু স্মৃতি কুমিল্লাবাসীকে এখনও পুলকিত করে। আগরতলা থেকে কোলকাতা যাবার পথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রথম কুমিল্লায় আসেন ১৯০৫ সালের ১৬ জুলাই। এসময় কুমিল্লাবাসীর পক্ষ থেকে কবিকে বিপুল অভ্যর্থনা জানানো হয়। ওইদিন কবি কুমিল্লা টাউনহলে অভ্যর্থনা সভায় ভাষন দেন। দ্বিতীয়বার কবি কুমিল্লায় আসেন ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। কুমিল্লা অভয় আশ্রমের তৎকালিন সভাপতি ডা. সুরেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের আমন্ত্রনে আশ্রমের ত্রিবার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য কবি ময়মনসিংহের আঠারো বাড়ি থেকে রাতে কুমিল্লায় এসে পৌঁছান। কুমিল্লায় এটা ছিল কবির শেষ সফর। কবির সঙ্গে সফর সঙ্গি ছিলেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পুত্রবধু প্রতিমা দেবী ও তার পালিত কন্যা নন্দিনী, শান্তি নিকেতনের শিক্ষক নেপাল চন্দ্র, কবির কর্ম সচিব কালী মোহন ঘোষ এবং সেক্রেটারি মরিস প্রমুখ। ঢুলিপাড়া অভয় আশ্রম ভবনে কবি স্বপরিবারে অবস্থান করেছিলেন ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কুমিল্লায় তিনদিনের এ সফরে কবিকে কুমিল্লা মহিলা সমিতি, রামমালা ছাত্রাবাস ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। কুমিল্লায় তিনদিন অবস্থানকালে কবি শহরের চর্থায় নবাব হোচ্ছাম হায়দারের বাড়িতে মধ্যান্থভোজ, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড এলাকায় অ্যাডভোকেট অখিল চন্দ্রের বাড়িতে প্রাত:রাশ এবং মনোহরপুরে বিশিষ্ট ব্যাংকার ইন্দ্রভূষণ দত্তের বাড়িতে বৈকালিন চা পানে আপ্যায়িত হন। কুমিল্লায় অবস্থানকালে আরও কয়েকটি স্থানে কবিগুরুর পা পড়েছে।
Last Updated on May 8, 2023 10:10 pm by প্রতি সময়