
উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম। ফলনও অধিক। প্রয়োজন পড়ে না উর্বর জমির। আবাদ করাও সহজ। বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই। আর ভালো বাজারদর পেলে খরচের দ্বিগুন লাভ। আর এই খাদ্যশস্যটির নাম ভুট্টা। ধান ও গমের চেয়ে এটির পুষ্টিগুনও বেশি। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে এবারে বাম্পার ফলন হয়েছে ভুট্টার। বাম্পার ফলন ও মুনাফায় কৃষক পরিবারে বইছে আনন্দ।
কুমিল্লার আবাদি, অনাবাদি এমনকি চরাঞ্চলেও ভুট্টা চাষ বেড়েই চলছে। গবাদিপশু ও মৎস্য, পোলট্রি শিল্পের খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সারা বছর ভুট্টার চাহিদা থাকে। অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভজনক, কম পরিশ্রমে বেশি ফলন, অল্প সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন ভুট্টা চাষে।
কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, চান্দিনা, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও নাঙ্গলকোটের কৃষকদের কাছে ভুট্টা কমখরচে অধিক লাভের ফসলে পরিনত হয়েছে। এবারে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় প্রতি একর জমিতে ১২০ থেকে ১৩০ মণ ভুট্টার ফলন মিলছে। বাজারদরও ভাল। এ বছর প্রতি মণ ভুট্টা ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচের দ্বিগুন লাভ আসছে ভুট্টা বিক্রির আয় থেকে। আর তাইতো কুমিল্লার এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভুট্টার চাষ কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে তুলেছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে ভুট্টা আবাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছেন কুমিল্লার কৃষকরা। জেলায় ১৩ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দাউদকান্দি উপজেলায় ৮ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
এছাড়াও তিতাস, চান্দিনা, হোমনা, মুরাদনগর, মেঘনা, তিতাসে এবারে ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের ভুট্টা কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ফসল আবাদে যে খরচ ও পরিশ্রম হয়ে থাকে, ভুট্টা আবাদে স্বল্প সার, সেচ ও পরিশ্রমেই ঘরে তোলা যায় সোনালী দানার ভুট্টা। কৃষকরা জানান, ক্ষেতে থাকা অবস্থাতেও ভুট্টা বিক্রি হয়ে যায়। ভুট্টার সবুজ গাছও কেজি ধরে সাইলেজ তৈরির জন্য বিক্রি হয়ে থাকে। ভুট্টা ঘরে তোলার পর ভুট্টার গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কামাইরকান্দি গ্রামের ভুট্টা চাষীরা জানান, এক বিঘা জমিতে চাষ করতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। ভালো ফলন আর সঠিক দাম পেলে প্রতি বিঘা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। ইতিমধ্যে ওই গ্রামের কৃষকরা ক্ষেত থেকে ভুট্টা কেটে বাড়িতে তোলা শুরু করেছেন।
কৃষি ও পরিবেশবিদ মতিন সৈকত জানান, ভুট্টা লাভজনক ফসল। ভুট্টা উৎকৃষ্টমানের গবাদি পশুর খাদ্য। মৎস্য ও পোলট্রি খাবার হিসেবেও ভুট্টা গুনগত, মানসম্মত। জেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ জমিতে ভুট্টার ব্যাপক ফলনের দিকে কৃষকেরা ঝুঁকছেন, তবে একজন পরিবেশবিদ হিসেবে আমি মনে করি ফসলের মাঠে সবধরণের ফসলের বৈচিত্র্য থাকুক।
বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ভুট্টার পুষ্টিগুন অনেক। ভুট্টার পটাশিয়াম ও ক্যারোটিনয়েড হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারি। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদপিন্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, কুমিল্লা জেলায় এ বছর ভুট্টা চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আমরা কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা ও রাজস্ব কর্মসূচিতে বিনামূল্যে ভুট্টা বীজ বিতরণ করেছি। ভুট্টার জমি নিয়মিত মনিটরিং করা হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক তাদের সহায়তা করা হচ্ছে। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। আমরা চাই কেবল ভুট্টাই নয়, সব ধরণের ফসল উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠুক, লাভবান হোক।