[পুলিশের দাবি : ওয়ারেন্টের আসামি ধরতে গেলে হামলা চালানো হয়]" />
নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুট এবং মারধরের অভিযোগে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার তিন এসআইসহ ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।মামলাটি দায়ের করেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সালমা আক্তার। মামলাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ সুপার কুমিল্লাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে বেশ তোলপাড় শুরু হয়।
মামলার বিবাদীরা হলেন, ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সাইফুল ইসলাম, জীবন কৃষ্ণ মজুমদার, কামাল হোসেন, এএসআই কৃষ্ণ সরকার, এএসআই মতিউর রহমান, পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান ও জামাল হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জন।
এদিকে পুলিশের দাবি, চান্দলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গেলে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয় এবং এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাজানো অভিযোগে এ মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার বাদী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় বাদীর ভাই লোকমান হোসেনের খোঁজে ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। এ সময় পরিচয় জানতে চাইলে তারা সবাই ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ বলে দাবি করে। তারা ঘরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রুমে তল্লাশি শুরু করেন। কোন মামলায় ওয়ারেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে তারা গালমন্দ করে লাঠি দিয়ে ঘরের শোকেসের গøাস ভেঙে ফেলে। আলমারির চাবি নিয়ে তল্লাশির নামে ড্রয়ারে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা, দুই জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, দুইটি চেইন ও তিনটি আংটিসহ চার ভরি স্বর্ণালংকার এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এসময় তার (বাদী সালমা আক্তার) চিৎকার শুনে পাশের বাড়িতে থাকা তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান ও স্বামী আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে পার্শ্ববর্তী বিল্লাল খানের দোকানের সামনে আসেন। তখন পুলিশ সদস্যরা তার স্বামী আবুল কালাম আজাদকে দোকানের সামনে থেকে টেনে হিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করলে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান পরিচয় দিয়ে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের আপত্তি জানান।
এসময় এএসআই কৃষ্ণ সরকার তার বাবার মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। আঘাতের ফলে মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান রক্তাক্ত জখম হন। পুলিশের অন্য সদস্যরা তার স্বামীকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। তারা স্থানীয় লোকজনকে গুলির হুমকি দিয়ে তার স্বামী আবুল কালাম আজাদকে আটক করে নিয়ে যায়। এমন অভিযোগ এনে সালমা আক্তার পুলিশের ৭ সদস্যের নাম উল্লেখ করে গত ৯ আগস্ট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলি আদালতের বিচারক বেগম মিথিলা জাহান নিপা মামলাটি কুমিল্লা পুলিশ সুপারকে তদন্তের দায়িত্ব দেন এবং অতিরিক্তি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ মামলায় বাদীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা সাংবাদিকদের জানান, ‘বাদীর (সালমা আক্তার) আপন ভাই হত্যা, ডাকাতি, চুরি, মাদকসহ ৯ মামলার আসামি লোকমান হোসেনকে গত ৩ আগস্ট গ্রেফতার করতে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায় ও মারধর করে।
ওসি আরও বলেন, এসময় লোকমান পালিয়ে গেলেও পুলিশ তার ভগ্নিপতি নোয়াখালীতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি সালমা আক্তারের স্বামী আবুল কালাম আজাদ, তাদের সহযোগী মাদক ও মারামারি মামলার আসামি ইকবাল হোসেন ও এনামুল হকসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের উপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২ জনকে আসামি করে পরদিন থানায় মামলা হয়। ৮ আগস্ট রাতভর পুলিশ অভিযান চালিয়ে লোকমান হোসেন, তার সহযোগী ইসহাক খান, হাবিবুর রহমান বাবু, হৃদয় মুন্সীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। ৯ আগস্ট তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ৯ মামলার আসামি লোকমান হোসেনের বোন ও গ্রেফতার আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সালমা আক্তার বাদী হয়ে মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ সদস্যদের বিবাদী করে ৯ আগস্ট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বলেও দাবি করেন থানার ওসি।এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on August 12, 2021 6:37 pm by প্রতি সময়