কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. রুহুল আমিনের সঙ্গে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনা সভায় কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদের বাকবিতন্ডার জের ধরে এমপি সমর্থিত নেতা-কর্মীরা ব্যারিকেড দিয়ে সভাপতির গাড়ি ভাংচুর করেছে। এঘটনায় সভাপতিসহ চার জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) কুমিল্লার চান্দিনা আধুনিক পৌর কমিউনিটি সেন্টারে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে ফেরার পথে চান্দিনা-রামমোহন সড়কের সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে এ হামলা ও গাড়ী ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মু. রুহুল আমিন, তার ব্যক্তিগত সহকারি আজম খান, গাড়ি চালক জমির উদ্দিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজিব আহত হন। এসময় সভাপতি মু. রুহুল আমিনের গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দিনা থানার ওসি আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ জানান, বিষয়টি জানার পরপরই তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের আলোচনায় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মু. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের এমপি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সভা চলাকালিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ। তিনি তার বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের কিছু অসংগতি আছে। আমার মনে হয়না জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে এখানে অনেকেই দাওয়াত পেয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের এমন কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই’।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মু. রুহুল আমিন দাওয়াত প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন আধুনিক যুগ, জেলা আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে ও হোয়াটসঅ্যাপে সকলকে দাওয়াত করেছি’। সভাপতির এমন বক্তৃতার বিরোধীতা করে এমপি কালাম বলেন, ‘না, এটা মোটেও সত্য নয়। ওয়েবসাইটেও দাওয়াতপত্র নেই এবং আমার হোয়াটসঅ্যাপেও ফোন বা ম্যাসেজ আসেনি’। এ কথা বলতেই সভাপতি বলেন, ‘চুপ করো, বেশি কথা বলো না। তুমি বসো’। এ কথা বলতেই অনুষ্ঠানস্থলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এমপি কালাম সমর্থকরা।
এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি ও তার অনুসারিরা। পরে সভা শেষ করে অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি কুমিল্লায় জরুরী সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যান। কিছুক্ষণ পর পৌর মাঠে সভাপতির বিরুদ্ধে আপত্তিকর শ্লোগান দেয় এমপি কালাম অনুসারিরা। পরে মু. রুহুল আমিন তার গাড়িযোগে মুরাদনগর যাওয়ার পথে কয়েকটি মোটরসাইকেল গাড়িটির পিছু নিয়ে চান্দিনা বাজারের রামমোহন সড়কের সাব রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে হামলা চালিয়ে গাড়িটি ভাংচুর করে। এতে দলীয় সভাপতিসহ চারজন আহত হন। খবর পেয়ে চান্দিনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে থানার সামনে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির উপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রুবেল ও দেবীদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম আহবায়ক ইমরান আরেফিন ইমু সহ ছাত্রলীগ নেতাদের দায়ী করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মু. রুহুল আমিন, সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান জয়, সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ উল্লাহ, বাসুদেব ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন কবির, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোতাহার হোসেন মোল্লা, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজিব, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পারুল আক্তার প্রমুখ।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদ এমপি বলেন, দলীয় কোরামে অনেক কথাই হতে পারে। এসব বিষয়ে কোন হামলা-মারামারি আমি সমর্থন করিনা। আমি স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছি ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হউক।
# প্রতিসময় রিপোর্ট
Last Updated on March 7, 2024 8:19 pm by প্রতি সময়