বাজার ছাপিয়ে সড়কের দুই পাশে বৈশাখি মাছের মেলা ঘিরে হাজারো মানুষের কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী রাজগঞ্জ, মোগলটুলি ও সংলগ্ন এলাকা। রাজগঞ্জ বাজারের মাছের মেলায় এ অঞ্চলের লোকজন খুঁজে পায় বাঙালি ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
পহেলা বৈশাখের সকালে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া হাজারো মাছের আঁশটে ঘ্রাণ জানান দেয় এটি রাজগঞ্জ বাজারের মাছের মেলা। যার পরিধি ঠেকেছে বাজার সংলগ্ন এলাকার দুইদিকের সড়কে। মৎস্যখাতে বিপ্লব সৃষ্টি করা কুমিল্লা জেলায় কেবলমাত্র নগরীতেই নববর্ষের প্রথমদিনে কয়েককোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে।
ঐতিহ্য ও বিশেষত্বের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জের বৈশাখি মাছের মেলা। যুগ যুগ ধরে বৈশাখী মাছের মেলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে রাজগঞ্জের মৎস্য ব্যবসায়িরা। পহেলা বৈশাখ ঘিরে রাজগঞ্জ মৎস্য বাজারের ভেতর ছাপিয়ে মাছের মেলা স্থান করে নেয় একসময়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের দুইপাশে মোগলটুলির পূর্বদিকের মোরগবাজার, থানা রোড হয়ে পশ্চিমদিকে হাইস্কুল পর্যন্ত এলাকা।
বৈশাখের প্রথমদিন ভোরের সুর্য উঠার আগেই মৎস্য আড়তগুলোতে হাকডাক শুরু। আর ভোর ছয়টা থেকেই বিক্রেতারা বড় থালা-ঢালায় মাছ সাজানোর কাজ শুরু করেন। বৈশাখের প্রথম দিনে রাজগঞ্জ বাজার ও সংলগ্ন সড়কে মাছের মেলার এমন দৃশ্য কেবল ক্রেতাই নয়, শিশু-কিশোরাও উপভোগ করেছে। বৈশাখি মাছের মেলা নতুন প্রজন্মের চোখে সৃষ্টি করেছে বিস্ময়। অনেকে বড় আকারের মাছের সাথে সেলফি তুলে উল্লাস প্রকাশ করেছে।
রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয় সারা দেশে। এদিন রাজগঞ্জসহ নগরীর অন্যান্য বাজারে বড় আকারের মাছ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। নগরীর বাজারগুলোতে ভোর ৬টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কাতল, রুই, চিতল, ব্রিগেড, ঘাসকার্প, সিলভারকার্প ও বোয়াল মাছের মেলা জমে উঠে। তিন কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিশ কেজি ওজনের মাছ বিক্রেতাদের থালায়-ঢালায় ঠাঁই পেয়েছে। তিনশো থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে মাছ। আবার বড় বড় হাফড্রামে পানিতে রেখে জীবিত মাছও খুশি মনে কিনেছেন ক্রেতারা। এসব মাছ যশোর, রাজশাহী, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, আশুগঞ্জ থেকে ট্রাকযোগে ‘বিশেষ পদ্ধতিতে’ জীবিত রেখে বাজারে আনা হয়।
দেশিয় মাছ দাউদকান্দি, চান্দিনা, দেবিদ্বার, চান্দিনা, লাকসাম, ব্রাহ্মণপাড়া থেকে রাজগঞ্জসহ নগরীর অন্যান্য বাজারে স্থান পায়। নগরীতে রাজগঞ্জ, চকবাজার, নোয়াপাড়ায় প্রায় ৩৫টি মাছের আড়ত রয়েছে। আড়তের বাইরে পুকুর-দিঘী থেকে ধরা মাছও বাজারে তুলেছেন বিক্রেতারা।
মাছ বিক্রেতা আনিস জানান, সে রাজগঞ্জ বাজারের ভেতরে মাছ বিক্রি করে। পহেলা বৈশাখ ঘিরে তারা কয়েকজন মিলে সড়কের পাশে ঢালা পেতে বসেছে। দেবিদ্বার, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া থেকে তারা মাছ আনেন। মাছের দাম কম-বেশি বড় কথা নয়, বৈশাখের প্রথম দিন সবাই আনন্দের সঙ্গে মাছ কিনে থাকেন।
নগরীর রাজগঞ্জ বাজারের মৎস্য আড়তদার মোবারক জানান, এবারে নববর্ষের প্রথমদিন রাজগঞ্জে যে পরিমান মাছ স্থান পেয়েছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ৮০ভাগই বিক্রি হয়েছে কাতল মাছ। মুলত বৈশাখে মাছের মেলায় কাতলের দিকেই ক্রেতাদের দৃষ্টি বেশি পড়ে।
Last Updated on April 14, 2024 8:29 pm by প্রতি সময়