হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা কুমিল্লায় বিমানবন্দর চালু এখন সময়ের দাবী বলে মনে করছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু কবে উড়বে উড়োজাহাজ ? এ প্রশ্ন ২৭ বছর ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীর মনে। কারণ ২৭বছর আগে তথা ১৯৯৬ সালে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন কুমিল্লার এ বিমানবন্দরেই শর্ট টেক অব ল্যান্ডিং বা স্টল বিমান সার্ভিস চালু করা হবে। বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাতেই ফের উড়োজাহাজ ওঠানামা করবে কুমিল্লা বিমানবন্দরে।
কুমিল্লায় বিমানবন্দর ১৯৪০ সালে নেউরা-ঢুলিপাড়া এলাকায় ৭৭ একর ভূমির উপর স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৫০ সাল থেকে শুরু করে অনুমান ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই বিমানবন্দর হতে তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দরে অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল করতো। পরবর্তীতে ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন এবং ১৯৮০ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হলে কুমিল্লা বিমানবন্দরের কার্যক্রম অজ্ঞাত কারণেই বন্ধ হয়ে পড়ে। এভাবে দীর্ঘ ৪৫ বছর উড়োজাহাজ ওঠা নামা না করলেও জায়গাটির পরিচিতি এখনো কুমিল্লা বিমানবন্দর নামেই রয়েছে। এটি বর্তমানে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এরিয়ার মধ্যে পড়েছে।
কুমিল্লা বিমানবন্দর সুত্রে জানা যায়, এখানে উড়োজাহাজ ওঠানামার সব সুযোগ সুবিধাই রয়েছে। সেই হিসেবে এটিকে সচল বলা যায়। কেননা এখানে সর্বাধুনিক বিমান পথনির্দেশক (ডিভিওআর) এবং বিমানের দূরত্বমাপক ডিএমই সিগন্যাল ও কন্ট্রোল টাওয়ার রয়েছে। এখান থেকে বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০/৩৫টি উড়োজাহাজ প্রতিদিন সিগন্যাল ব্যবহার করছে। এ থেকে প্রতি মাসে দুই থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের। বেশি চলাচল করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রুটের উড়োজাহাজ।আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া উড়োজাহাজ এই রুটে চলে। এছাড়া রয়েছে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরের উড়োজাহাজ।
এবিষয়ে কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিমানবন্দরটি সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৩০/৩৫টি উড়োজাহাজ ডিভিওআর ও ডিএমই সিগন্যাল ব্যবহার করে। উড়োজাহাজ ওঠানামা না করলেও এটা থেকে ভালো রাজস্ব আয় হচ্ছে। রানওয়ে কার্পেটিং, ফায়ার ব্রিগ্রেড, এয়ারক্রাফটের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য টাওয়ারে বিএইচএফ সেট করার প্রয়োজন হবে। এগুলো হলেই বিমানবন্দরটি থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলে আর বাধা থাকবে না। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন মহলে কথা বলেছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, আমার জানামতে এ বিমানবন্দরে বর্তমানে ২৫জন কর্মকর্তা, কর্মচারি রয়েছেন। ৬ হাজার ফুট রানওয়ে রয়েছে। বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে। কেবল রানওয়ে সংস্কার, ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের জন্য জনবল নিয়োগ দিয়ে উদ্যোগ নিলেই কুমিল্লা বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা সম্ভব বলে মনে করছি। কুমিল্লা বিমানবন্দর চালু হলে কুমিল্লা ও নিকটবর্তী জেলা চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লহ্ম্রীপুর, ফেনির বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হবে এবং এখানে ইপিজেড থাকায় সহজ হবে কুমিল্লার সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ। এর ফলে অর্থনীতির চাকা আরও বেগবান এবং এখানকার পর্যটন শিল্পসহ সার্বিক ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
Last Updated on May 9, 2023 3:39 pm by প্রতি সময়