শেখ হাসিনার নেৃতত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবরে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি ক্ষোভের আগুনের লেলিহান শিখাও দেখেছে বিশ্ববাসী। আর ক্ষোভের সেই আগুনে আওয়ামী লীগের এমপি. মন্ত্রী ও নেতাদের অনেকেরই বাসভবন থেকে শুরু করে তাদের পরিচালনাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও পুড়েছে। কেবল তাই নয়, প্রায় ১৫ বছর ধরে জগদ্দল পাথরের দেশের সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চেপে বসা স্বৈরাচারি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ সব শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের মনের ভেতরের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত করেছে দেশের প্রায় সকল জেলায় দলটির কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে।
কেবল ভাঙচুর ও আগুন দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ক্ষুব্ধ লোকজন। তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ে যাচ্ছে, আর বলছে ‘জনগণের টাকা লুট করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলো বহুতল ভবন থেকে শুরু করে আধুনিকায়ন করা হয়েছিল। ভবনগুলোর একটি ইটের মালিকও আওয়ামী লীগের লুটেরা নয়। জনগণের টাকায় লুট করে গড়ে তোলা অট্টালিকার মালিক কুমিল্লার জনগণ, তাই এসব সম্পদ জনগণ নিয়ে যাবে।’ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রামঘাট এলাকায় ১০ শতক জমির উপর নির্মিত ৯ তলা ভবনের কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দরজা, জানালা, গ্রীল, লোহার গেইট, ইট, টাইলস খুলে নিয়ে যাওয়ার সময় এসব কথা বলেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক লোক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নিচতলার গ্যারেজের ও প্রবেশ পথের লোহার গেইট খুলছে, কেউ কাঠের দরজা খুলে অটোরিকশায় তুলছে। কেউ আবার টাইলস খুলে জড়ো করছে, কেউ কেউ অটোব্রিকস (ইট) খুলে ভ্যান গাড়িতে রাখছে। উৎসুক লোকজন মোবাইল ফোনে এসবের ভিডিও করছেন। এসময় উপস্থিত অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কুমিল্লার মানুষের টাকা লুট করে এই অট্টালিকা বানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের লুটেরাদের এখানে বসে আর ভোট চুরির ষড়যন্ত্র ও আমোদফূর্তি করতে দেওয়া হবে না। কুমিল্লার মানুষের টাকা লুট করে বানানো এই ভবন প্রয়োজনে ভেঙ্গে কুমিল্লার মানুষ একটি ইট পর্যন্ত নিয়ে যাবে। সোমবার আগুন দেওয়ার আগে পরে কুমিল্লার বিক্ষুব্ধ মানুষ এই ভবনের চেয়ার, টেবিল ও অন্যান্য জিনিষ নিয়ে গেছে। এটি লুট নয়, চুরি নয়- এটি ১৫ বছর ধরে জিম্মি করে রাখা কুমিল্লার মানুষের অধিকার।’
প্রসঙ্গত, অত্যাধুনিক মানের ৯ তলা ভবনটিতে মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অফিসরুম, কনফারেন্স হল, মিডিয়া রুম, গেস্ট হাউজ, ক্যাফেটারিয়া, ইনডোর গেম স্পট, ছাদ বাগান রয়েছে। ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর সদ্য পদত্যাগ করা ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টি উদ্বোধন করেন।
এদিকে এর আগে সোমবার (৫ আগষ্ট) দুপুরে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার খবরে কুমিল্লা শহরে বিজয় উল্লাস করার এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ৯ তলা ভবনে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও সোমবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরের এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহারের মুন্সেফবাড়ির বাসভবন, কুমিল্লা ক্লাব, পুলিশলাইন্সসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও নেতার বাড়িতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এমপি বাহারের বাসভবনের গ্যারেজে থাকা তিনটি গাড়ি ভষ্মিভূত হয় আগুনে। এছাড়া বিক্ষুব্দ জনতা এমপি বাহারের বাড়ির পুড়ে যাওয়া ছাড়া সকল মালামাল নিয়ে যায়। এতিহ্যবাহী কুমিল্লা ক্লাবের শতবর্ষের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে যায়। বিক্ষুব্দ লোকজন ক্লাবের সোফা, টিভি, কম্পিউটার ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদও নিয়ে যায়। ক্লাব মেম্বারদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ক্লাবটিতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে স্থানীয় এমপি বাহারের খবরদারিত্ব ও তাঁর অনুসারি ক্লাব মেম্বারদের আধিপত্যের জেরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ লোকজন।
Last Updated on August 6, 2024 7:30 pm by প্রতি সময়