এনজিওর ঋণের টাকার জিম্মাদার হওয়ার খেসারত দিয়েছেন মুরাদনগর উপজেলা সদরের উত্তর পাড়া গ্রামের সুমি আক্তার নামের এক নারী। এনজিওর দায়ের করা মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় ওই নারীর নামে। থানা পুলিশ ওয়ারেন্ট পেয়ে ওই নারীকে গ্রেফতার করতে যায় তার বাড়িতে। তাকে না পেয়ে থানায় নিয়ে আসা হয় অসুস্থ স্বামীকে। চারঘন্টা পর স্ত্রী থানায় গেলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় স্বামীকে। চার মাস বয়সী কোলের শিশুকে নিয়ে থানা হাজতে রাত কাটাতে হয় ওই নারীকে। পরদিন তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে জামিনে মুক্ত হন ওই নারী।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলের এই ঘটনা ঘিরে মুরাদনগরে মানুষের মুখে চলে নানা আলোচনা সমালোচনা। এনজিওর মানবিকতা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে এলাকাবাসীর মাঝে। অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন এই ঘটনায়।
জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ শাখা বেসরকারি ঋণদান সংস্থা দিলালপুর মহিলা সবুজ সংঘ থেকে করোনাকালীন সময়ে ৮০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন মুরাদনগর সদরের উত্তরপাড়ার মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তার ঋণের টাকার জিম্মাদার হোন তারই বোন একই গ্রামের আব্দুল মোতালেবর স্ত্রী সুমি আক্তার। করোনাকালীন সময়ে অনেক কষ্ট করে সেই ঋণের টাকার ৫০ হাজার পরিশোধ করে দেলোয়ার। সুদ সহ বাকি টাকা পরিশোধ না করেই আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায় মাস তিনেক আগে সৌদি আরব চলে যায় দেলোয়ার। বিষয়টি জানতে পারে এনজিওর লোকজন। পরে জিম্মাদার সুমি আক্তারের সাথে কথা বলে বাকি টাকার একটি কিস্তি তৈরি করে দেয়। এরমধ্যে একটি কিস্তি পরিশোধ করলেও আর্থিক সমস্যার কারণে বাকি কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় কুমিল্লার আদালতে মামলা ঠুকে দেয় ওই এনজিও। মামলায় ঋণ গ্রহিতা দেলোয়ারের পাশাপাশি জিম্মাদার সুমি আক্তারকেও আসামি করা হয়।
আদালত থেকে সুমি আক্তারের নামে জারি হওয়া ওয়ারেন্ট আসে মুরাদনগর থানায়। সেই ওয়ারেন্ট তামিল করতে নড়েচড়ে বসে মুরাদনগর থানা পুলিশ।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে মুরাদনগর থানার এসআই আলমগীর ওয়ারেন্ট নিয়ে যান সুমি আক্তারের বাড়িতে। সুমি আক্তারকে না পেয়ে তার অসুস্থ স্বামী মোতালেবকে থানায় নিয়ে আসেন। এ খবর জানতে পেরে সুমি আক্তার বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেন। পরে রাত আনুমানিক আটটার দিকে তিনি তার চার মাস বয়সী কোলের শিশু তোহা আক্তারকে নিয়ে মুরাদনগর থানায় হাজির হোন। পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সুমি আক্তারকে থানায় পেয়ে তাকে আটক করে স্বামীকে ছেড়ে দেন। সুমি আক্তার ও তার শিশুকন্যাকে থানা হাজতে রাখা হয়।
শুক্রবার রাতভর থানা হাজতে রাখার পর শনিবার (৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় কোলের শিশুসহ সুমি আক্তারকে পাঠানো হয় কুমিল্লার আদালতে। এদিন তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
মুরাদনগর থানার এস আই আলমগীর বলেন, ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য সুমি আক্তারের বাড়িতে গেলে সে পালিয়ে যায়। এসময় তার স্বামীকে দেখে নেশাগ্রস্ত মনে হওয়ায় ওসি সাহেবকে জানালে তিনি তাকে থানায় নিয়ে আসতে বলেন। পরে তার স্ত্রী থানায় আসলে স্বামীকে ছেড়ে দেয়া হয়। শনিবার সকালে আসামি সুমি আক্তারকে কুমিল্লার আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে মুরাদনগরের গণমাধ্যম কর্মীদের কেউ শুক্রবার রাতে কেউবা শনিবার সকালে থানায় হাজির হোন। অনেকেই থানা হাজতে আটক সুমি আক্তার ও তার শিশুর ছবি তোলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে এনিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ নুরুর রহমান জানান, পুলিশ যদি শিশু ও তার মাকে হাজতে রেখে থাকে তবে এটি ঠিক হয়নি। শিশুর জন্য আলাদা সেল রয়েছে।
মুরাদনগর থানার ওসি আজিজুল বারী ইবনে জলিল বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সুমি আক্তার ও তার শিশু সন্তানকে থানা হাজতের ভিতরে রাখার বিষয়টি মিথ্যা। কারণ আমার থানায় কোন নারী সেল নেই। তাকে থানার নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়েছে। এছাড়া তার স্বামীকে তুলে এনে থানায় আটকে রাখার বিষয়টিও মিথ্যা। এ ধরনের কোন ঘটনাই মুরাদনগর থানায় ঘটেনি।
এদিকে ওসির এ ধরনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সুমি আক্তারের স্বামী মোতালেব জানান, ওয়ারেন্ট আমার স্ত্রীর নামে। তাকে না পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে চার ঘন্টা আটকে রাখে। কোলের শিশু কন্যাকে নিয়ে আমার স্ত্রী থানায় হাজির হলে আমাকে ছেড়ে দেয়। তারপর তাদেরকে হাজতে আটকে রাখে। পুলিশ এখানে মানবিকতার পরিচয় দেয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
Last Updated on October 7, 2023 11:56 pm by প্রতি সময়