কুমিল্লার চান্দিনায় বাল্য বিবাহ পড়ানোর দায়ে এক মৌলভীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
এ ঘটনায় আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে উপজেলা প্রশাসনে তথ্যদাতা চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে জরিমানা ধার্য করে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানসহ মাতব্বররা। কিন্তু ওই ব্যক্তি জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করা হয়।
ঘটনাটি ঘটছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর গ্রামে। গত ১৪ এপ্রিল বাল্য বিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ভ্রাম্যমান আদালত ঘটনাস্থলে গিয়ে মৌলভীকে জরিমানা করে।
এ ঘটনায় ১৮ এপ্রিল ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানা সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল সুহিলপুর গ্রামের জনৈক জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে তার ১৬ বছরের ছেলের সাথে আপন খালাতো বোনের (১৩) বিবাহ সম্পন্ন হয়। ওই গ্রামের মসজিদের ইমাম মৌলভী ইকবাল বারী হোসেন ওই বিবাহ পড়ান। ওই বাল্য বিবাহের খবর পেয়ে ঘটনার দিন ইকবাল বারী নামের ওই মৌলভীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব।
এদিকে ভ্রাম্যমান আদালতকে ওই বিয়ের বিষয়টি গোপনে তথ্য দিয়েছে মর্মে গ্রামের আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে সন্দেহ করে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিয়ে পড়ানো মৌলভী স্থানীয়ভাবে সালিশ দরবার আহবান করেন। ওই সালিশ দরবারে আবুল হোসেন নামের ওই ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমান আদালতের তথ্যদাতা চিহ্নিত করে বৈঠক হয়।
সুহিলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সরকার সহ গ্রাম্য মাতব্বর সাইফুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে ওই সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে সন্দেহভাজন তথ্যদাতাকে আবুল হোসেনকে ২০ হাজার টাকা ও বরের পিতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করা হয়। আবুল হোসেন জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ও তার পক্ষের মো. হারুনুর রশিদ ও তার ছেলে মো. সুমন এবং বরের পিতা জয়নাল আবেদিনকে বেধরক মারধর করে সালিশকর্তারা।
এছাড়া তাদের ঘর বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় আহত হারুনুর রশিদের ছেলে নেছার উদ্দিন বাদী হয়ে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) চান্দিনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আবুল হোসেনকে কেন ভ্রাম্যমান আদালতের তথ্যদাতা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কেন তার বিরুদ্ধে সালিশ দরবার ডাকা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভী ইকবাল বারী ‘বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে’ বলে ফোন কেটে দেন।
সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সরকারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গ্রাম্য মাতব্বর সাইফুল ইসলাম খোকন বিষয়টি নিয়ে নানা কথা বললেও সবশেষে তিনি জানান, ‘আবুল হোসেনের টাকা আমার কাছে আছে আমি টাকা দিয়ে দিবো।’
চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোরশেদ পিপিএম জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব জানান, যে বাল্য বিবাহ পড়িয়েছেন তিনি নিবন্ধিত কাজী নন। সালিশের বিষয়টি আমি বৃহস্পতিবার রাতে শুনেছি। চান্দিনা থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে রাতেই নির্দেশনা দিয়েছি।
Last Updated on April 19, 2024 9:17 pm by প্রতি সময়