আজ (১২ ভাদ্র)। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ–বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে।মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক।তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।সাম্প্রায়িক চেতনার উর্ধ্বে থেকে সাম্যের গান কবিতা দিয়ে বাঙালি জাতিকে আপন করে নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবিকে একটি বাড়ি দেন।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
মাত্র বিশ থেকে বাইশ বছরের সাহিত্য চর্চায় কবি নজরুল বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার ভরে দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের আকাশে তিনি ধূমকেতু হয়ে এসেছিলেন। মজলুম জনতাকে তিনি জাগিয়েছেন তার বিষের বাঁশিতে। ছাত্র কৃষক মেহনতি মানুষকে সোচ্চার করেছেন বাঁধন হারা গানে। অগ্নিবিনায় সুর তুলে রচনা করেছেন সাত হাজারেরও বেশি গান। তার বিদ্রোহী কবিতা এখনো বাঙালী জাতিকে শোষন, বঞ্চনা আর অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সাহস যোগায়।
প্রসঙ্গত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কুমিল্লা। ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৩ সালের ১৫ডিসেম্বর পর্যন্ত কবি নজরুলের পাঁচবারের আগমনে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর ও কুমিল্লা শহরে ১১মাসের অবস্থান ঘিরে তিনি অজস্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন। দৌলতপুরে আলী আকবর খাঁর ভাগিনী সৈয়দা হককে (কবির দেয়া নাম নার্গিস আশার খানম) প্রেম করে বিয়েও করেছিলেন। আবার অজ্ঞাত কারণে বিয়ের রাতেই অভিমান করে নার্গিসকে ফেলে কুমিল্লা শহরে চলে এসেছিলেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন কান্দিরপাড়ের ইন্দ্র কুমার সেনের ভাতিজী আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে দুলীকে।
কবি নজরুলকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ১৯৪৫ সালের মাঝামাঝিতেই শুরু হয়। দেশ বিভাগের পর কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় নজরুল চর্চা।এর আগে ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি ও নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
১৯৬২ সালে কান্দিরপাড় থেকে ফরিদা বিদ্যায়তন পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয় নজরুল এভিনিউ।১৯৮৩ সালে কুমিল্লার তৎকালিন জেলা প্রশাসক সৈয়দ আমিনুর রহমানের উদ্যোগে কুমিল্লা শহরের যেসব স্থানে নজরুল বিচরণ ও অবস্থান করেছিলেন সেসব স্থানে টিনের স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে জেলা প্রশাসক হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী কবি নজরুলের অবস্থান ও ঘটে যাওয়া ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে স্থায়ীভাবে পাকা স্মৃতিফলক স্থাপন করেন।
এসব স্মৃতিফলকের মধ্যে নজরুল এভিনিউ সড়কে পশ্চিমদিকে প্রবেশ মুখের উত্তর পাশে বসন্ত মজুমদারের বাড়ির সামনের স্মৃতিফলক, নজরুল এভিনিউয়ের ফরিদা বিদ্যায়তনের সামনে ও কবির শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ ইন্দ্রকুমার সেনের বাড়ির সামনের স্মৃতিফলকটি ঘিরে রয়েছে এখানে কবির অবস্থানের বর্ণনা।ঝাউতলায় উকিল যোগেন্দ্র চন্দ্রের বাড়ির সামনের ফলক, দারোগাবাড়ি মাজার সংলগ্ন যে বাড়িতে কবি গানের আসরে বসতেন সেখানে বাড়ির বারন্দার ভেতরের দেয়ালে স্থাপিত ফলক, মুরাদপুর মৌলভীপাড়ার জানে আলম চৌধুরীর বাড়িতে (অধ্যাপক আমীর আলী চৌধুরীর বাসভবনের দেয়ালে) স্থাপিত ফলক এবং দক্ষিনচর্থায় শচীনদেব বর্মনের বাড়ির দেয়ালে নজরুলের স্মৃতিফল রয়েছে।
এছাড়াও ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে রাণীর দিঘীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসে কবি ‘মাধবী লতা দোলেসহ বেশ কয়েকটি গান লিখেছেন।দিঘীর ওই কোনেও রয়েছে নজরুল স্মৃতিফলক।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on August 27, 2021 3:21 pm by প্রতি সময়