# প্রতিদিন চিকিৎসা ব্যয় লাখ টাকা" />
তিসা পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ইরফান উল্লাহ এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ঢাকার কল্যাণপুর ইবনে সিনা প্রাইভেট হসপিটালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। ১৪দিনেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।
মঙ্গলবার ট্রাকিওস্টমি’র অপারেশন হয়েছে তবে ঝুঁকিমুক্ত না হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। জ্ঞান না ফেরায় লাইফ সাপাের্ট কতদিন চলবে এ ব্যাপারে চিকিৎসকও সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারছেন না।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের এমন অবস্থায় ইরফানের চিকিৎসায় ব্যয় প্রতিদিন প্রায় ১লাখ টাকা দাঁড়াচ্ছে। ফলে চিকিৎসার ব্যয় চালিয়ে যেতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে পরিবারকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও দেয়া হয়নি কোন সহায়তা। এমতাবস্থায় আর্থিক সাহায্য চেয়েছেন ইফরানের পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে দুর্ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করলেও গত ১২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে টাকা উত্তোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইফরানের পরিবারের হাতে প্রায় ৫৩ হাজার টাকা তুলে দিয়ে তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ বন্ধ রেখেছেন।
অর্থ উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞার পর এখনও কোনো আর্থিক সহযোগিতা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে ইরফানের চিকিৎসার জন্য পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে দুই দফায় প্রায় দেড় লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও বিভাগভিত্তিক অর্থ সাহায্যের আবেদন করা হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। গত ২০ নভেম্বর বিভাগের অনুমতিক্রমে পুনরায় অর্থ উত্তোলনের কাজ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে কয়েকদিনের সংগ্রহকৃত অর্থ ইরফানের পরিবারের হাতে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২২ নভেম্বর) অর্থ সহায়তার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ এম আব্দুল মঈনের সাথে দেখা করেছেন ইরফান উল্লাহর বড় ভাই আব্দুল আজাদ।
ইরফানের চিকিৎসার সার্বিক বিষয় জানতে চাইলে তার বড় ভাই আজাদ জানান, ‘ইরফানের চিকিৎসার পেছনে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। এর মধ্যে ওষুধে প্রায় ৫০ হাজার টাকা এবং লাইফ সাপোর্টের বিল প্রতিদিন প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। টানা ১৪ দিনে ধরে এ ব্যয় বহন করে আসছি আমরা। যার মধ্যে লাইফ সাপোর্টের ৭ লাখ টাকা বিল এখনো বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত নগদ ওষুধ ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। এছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে যা হিসেবের বাইরে। দিন যত যাচ্ছে এ ব্যয়ের পরিমান আর আর্থিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে আমাদের পরিবারে। ইরফানের চিকিৎসার পেছনে পারিবারিক যা সঞ্চয় ছিল সব শেষ। এখন আত্মীয় স্বজন থেকে ঋণের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হচ্ছে। এছাড়াও গত ১১ নভেম্বর মস্তিষ্কের ও মঙ্গলবারে ট্র্যাকিওস্টমি’র অপারেশন হয়েছে যা দুইটি ব্যয়বহুল অপারেশন ছিল।
এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী জানান, পরিসংখ্যান বিভাগ ও অ্যাসোসিয়েশন উদ্যোগে দুই দফায় আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। ইরফানের চিকিৎসার ফান্ড কালেকশনের জন্য বিভিন্ন বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে ফান্ড এখনো হাতে আসেনি। আমরা আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে প্রশাসন বরাবরও চিঠি দিয়েছি। গত ১১ নভেম্বর শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ইরফানকে দেখতে গিয়ে আর্থিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এদিকে টানা দশদিন পার হলেও চিকিৎসার জন্যে প্রশাসন থেকে কোনো রকম আর্থিক সহযোগিতা পায়নি ইরফান।
আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কোষাধ্যক্ষ এ বিষয়ে বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে একই কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান জানান, আর্থিক সহযোগিতার জন্য পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। ইস্যুটা যেহেতু শিক্ষার্থীর যার কারনে আমরা বিভাগের হিসাবে টাকা দিতে পারছি না। এর জন্য ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের কাউকে আবেদন করতে হবে।
এদিকে প্রক্টর জানিয়েছেন বাস মালিকের সাথে একটি সমঝোতা হয়েছে শুনেছি।
তবে ইরফানের বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাস মালিক ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে এবং পরবর্তীতে আরও ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো রকম আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইফরানের বড় ভাই আজাদ জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি তবে উপাচার্য ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
কুমিল্লা রিজিওন হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম জানান, মামলা হওয়ার সাথে সাথে কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় আমরা বাসের ড্রাইভার জাবেদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাসের ড্রাইভার, মালিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উপস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী পরিমান আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা হয়েছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
এ বিষয় জানতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মো. মুশফিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার জাগুরঝুলি এলাকায় তিশা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো ব-১৫-১৬৪৮ নাম্বারের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় গুরুতর আহত হন ইরফান উল্লাহ।
Last Updated on November 23, 2023 6:54 pm by প্রতি সময়