করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সরকারি ঘোষণায় বন্ধ রয়েছে। আর বন্ধকালীন সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক সব খরচই কম হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল বন্ধের মধ্যেও এতেটাই বেশি হয়েছে, যা সন্দেহ তৈরি করেছে। আর এ সন্দেহের পথ ধরে বেরিয়ে আসে বিদ্যালয়ের বিদ্যুতে আলো জ্বলে প্রধান শিক্ষকের ঘরসহ আরও কয়েক ঘরে। ব্যাস, ভ্রাম্যমান আদালতের সাজায় শিক্ষক জরিমানা গুনলেন ২০ হাজার টাকা আর ঘরের মালিক এক মাসের জন্য গেলেন শ্রীঘরে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর এমএ জলিল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি বাড়িতে। আয়নল হক সরকারের ওই বাড়িতেই ভাড়া থাকেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার (২সেপ্টেস্বর) বিকেলে দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর এমএ জলিল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আয়নল হকের বাড়িতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.কামরুল ইসলাম খান।
জানা যায়,গত বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১২ হাজার ৯১ টাকাসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য খরচের রশিদে স্বাক্ষর আনতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যান। করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকার পরও দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল ১২ হাজার ৯১ টাকা দেখে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সন্দেহ মনে হয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর দাউদকান্দি জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সেলিনা আক্তারকে নির্দেশ দেন। ডিজিএম বিদ্যুৎ অফিসের টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহারের সত্যতা পান।
তদন্ত টিম দেখতে পান, শহীদনগর এমএ জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই আয়নল হকের বাড়িতে প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ভাড়া থাকেন। অবৈধভাবে ওই স্কুলের একটি কক্ষের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে কৌশলে বিদ্যুৎ সংযোগ টেনে প্রধান শিক্ষক তার ভাড়া বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন এবং ওই বাড়ির আরও ৫জন ভাড়াটিয়ার বিদ্যুৎ সংযোগও অবৈধভাবে স্কুলের মিটারের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। আর প্রতিমাসে অন্যদের কাছ থেকে বিদ্যুত ব্যবহারের টাকা ভোগ করতেন প্রধান শিক্ষক।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের সত্যতা পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.কামরুল ইসলাম খান বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ওই প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং মালিক আয়নল হক সরকারকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.কামরুল ইসলাম খান বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। একজন শিক্ষক এরকম কাজ করতে পারেন, এটা ভাবাই যায় না। ১৯১০ সালের বিদ্যুৎ আইনের ৩৯ এর ‘ক’ ধারানুযায়ী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াকে ২০হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে ও একই ঘটনায় বাড়ির মালিক আয়নল হক সরকারকে ১মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on September 3, 2021 7:20 pm by প্রতি সময়