দুর্নীতি বিষয়ে সম্প্রতি দেওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের এ বক্তব্য সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক। একই সাথে সরকার প্রধানের জন্য অবমাননাকর। কারণ, প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশের বার্ষিক জাতীয় আয়ের ২ থেকে ৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে।’
গত সোমবার (৩১ জুলাই) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য ড.এ এফ এম আব্দুল মঈন তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘আমাকে একলোক এসে বলে স্যার, এ দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নতি হচ্ছে না। আমি বলি উল্টোটা করে বলো না কেন? দেশে দুর্নীতির হচ্ছে দেখেই তো উন্নতি হচ্ছে।তখন সে আমাকে বলে স্যার আপনি এটা কি করে বলেন, আপনি একজন ভাইস চ্যান্সেলার হয়ে….
এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। কিন্তু এই যে ঘুষ খায়, এজন্য মানুষ পদ্মার পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মার পাড়ের গরীব মানুষেরা ইলিশ বিক্রি করে ধনী হচ্ছে…
চীনে দুর্নীতি হয় বলে চীন এত উন্নত মন্তব্য করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘করাপশন একচুয়ালি ব্লকস ডেভেলপমেন্ট, দ্যাটস নট ট্রু (দুর্নীতি আসলে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, এটি সত্য নয়)। তাহলে চায়না কেন এত উন্নতি করে। চায়নায় তো সবাই দুর্নীতি করে।’
একই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন….. দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গায় থেকে যদি বল, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাঁধা নয়।’
উপাচার্যের এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে শিক্ষক সমাজসহ বিভিন্ন জায়গায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, উপাচার্য প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতি সহায়ক অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং দেশবাসীকে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতির মতো জঘন্য, অবৈধ ও অসাংবিধানিক অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। যা একজন উপাচার্যের জন্য আত্মঘাতীমূলক অনৈতিকতার উদাহরণ এবং বাস্তবে একটি অপরাধ। দুর্নীতি করা যেমন আইনের লঙ্ঘন, তেমনি কাউকে দুর্নীতি করতে প্রশ্রয় দেওয়া বা প্ররোচিত করা একই ধরনের অপরাধ।
Last Updated on August 2, 2023 9:33 pm by প্রতি সময়