আজ ২৬ ডিসেম্বর, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও কুমিল্লার আলোকিত মানুষদের একজন সাবেক এমপি অধ্যাপক মফিজুল ইসলামের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল গ্রামে ১৯২৬ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম। তাঁর পিতার নাম মো. বন্দে আলী ও মাতা আতরুন্নেসা। শিক্ষাবিদ পরিচয়ের বাইরেও তিনি ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ আইনজীবী, লেখক ও গবেষক হিসেবে সকল মহলে সমাদৃত ছিলেন।
অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম ১৯৪৩ সালে ইউসুফ বহুমুখী কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৪৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অবিভক্ত ভারতে মেধা তালিকায় ৮৫তম স্থান অর্জন করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ (পাস) উত্তীর্ণের পর ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এবং ১৯৬২ সালে আইন বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের সরাসরি ছাত্র ছিলেন। তাঁর সাহচর্য অধ্যাপক মফিজুল ইসলামকে বাম রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৪৬ সালেই তিনি চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামের আবু তোরাব হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এরপর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার দায়ে সরকারি চাপের মুখে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ছেড়ে দেন এবং লাহোরের ‘দি পাকিস্তান টাইমস’ এর চট্টগ্রাম সংবাদদাতার কাজ করেন। তাঁরই উদ্যোগে ও পরিচালনায় ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সরকার বিরোধী বাংলা দৈনিক ‘আমার দেশ’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। ৬ মাস পর সরকারি চাপের মুখে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ১৯৫৩ সালের গোড়ার দিকে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।
তিনি প্রথমে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ থেকে কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থীরা বেরিয়ে এলে অধ্যাপক মফিজুল ইসলামও তাদের সাথে বেরিয়ে আসেন। ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ গঠিত হলে তিনি ন্যাপে যোগদান করেন এবং কুমিল্লা জেলা ন্যাপ এর সভাপতি হন।
ন্যাপের প্রাণপুরুষ অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ ও মফিজুল ইসলামের উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি এ কলেজের প্রথম উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ওই সময়ে তিনি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার চট্টগ্রাম জেলা সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া নির্বাচনী এলাকা থেকে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জাতীয় লীগের হয়ে লাঙ্গল প্রতীকে বিরোধী দলীয় প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন।
সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি ‘সোভিয়েত রাশিয়া, আফগানিস্তান ফেক্টস এন্ড ফিকশন’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন এবং তা বহুল আলোচিত হয়।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মফিজুল ইসলামের অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘Degree Functional English. Advanced Essay. Principles of Commercial English. Fundamentals of Political English. International lwa made Easy. Standard Functional English. মৌলিক অর্থনীতি, বাণিজ্যিক পত্র সংযোগ, সোভিয়েত ইউনিয়ন: স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইত্যাদি।
তাঁর রচিত প্রতিটি গ্রন্থ তথ্যসমৃদ্ধ ও পাঠক সমাদৃত। উপমহাদেশের এই খ্যাতিমান মেধাবী শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ইংরেজি ও বাংলা ব্যাকরণ প্রণয়নসহ বাণিজ্য, অর্থনীতি, আইন ও গবেষণালব্ধ অসংখ্য পুস্তক রচনা ও সংকলন করে বহুল আলোচিত হয়েছেন।
একসময় তিনি রাজনৈতিক সকল কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। আইন পেশায় তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভোররাতে আলোকিত মানুষ দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম ৬৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Last Updated on December 26, 2023 2:40 pm by প্রতি সময়