
কুমিল্লায় ‘নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটাল’ এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু ও তার অনুসারি পরিচালকদের সরিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির এক নেতা দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সামছুদ্দিন কালু নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। সামছুদ্দিন কালু গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপন করেন। অপরদিকে যিনি হাসপাতালটি দখল করে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন তার নাম আনোয়ার হোসেন নয়ন। তিনি নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও ২০১২ সালের ৭ মে ৪০ জন অংশীদার নিয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটাল নাম দিয়ে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি অংশীদার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক পৌর মেয়র সামছুদ্দিন কালু। হাসপাতালটির নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় সকল কাগজপত্র ওই আওয়ামী লীগ নেতার নামে। হাসপাতালের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স সামছুদ্দিন কালুর নামে। চলতি বছরের ৮ জুলাই নাঙ্গলকোট পৌরসভা থেকে সামছুদ্দিন কালুর নামে হাসপাতালটির ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছিল বলে পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন ওরফে ছোট নয়নের নাম ছিল না অংশীদারদের মধ্যে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা এক হয়ে সামছুদ্দিন কালুর রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসায়িক স্থাপনা এবং বসতবাড়িসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাঙচুর চালান। এ সময় নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে অবস্থিত নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটালে ভাঙচুর চালাতে গেলে তাতে বাধা দেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়ন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে হাসপাতালটিতে আগুন ও ভাঙচুর থেকে রক্ষা করেন।
পরবর্তীতে গত ৯ আগস্ট জরুরি সভা ডাকেন হাসপাতালের পরিচালক ও অংশীদারেরা। সভায় সামছুদ্দিন কালুকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে আনোয়ার হোসেন নয়নকে চেয়ারম্যান করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিন কালুর অনুসারীদের বাদ দিয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। সভায় কালু বা তার অনুসারী কোনো অংশীদার বা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগের বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়ন গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমি হাসপাতালের একজন অংশীদার ছিলাম। ২০১২ সালে সামছুদ্দিন কালু হাসপাতাল দখলে নিয়ে আমার অংশীদারিত্ব কেড়ে নেয়। গত ৫ তারিখ হাসপাতালটি পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। আমি আগুনের হাত থেকে হাসপাতালটি রক্ষা করি। পরবর্তীতে আমি হাসপাতালের অংশীদারত্বের জন্য আবেদন করেছি। আমি এখনও নিশ্চিত নই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেবে কি না। দখল বা জোর করে চেয়ারম্যান হওয়ার কিছু নেই। সেখানকার পরিচালকরা আমাকে জোর করেছে আমাকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সম্প্রতি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
হাসপাতালটির পরিচালক মো. আলম বলেন, একটি হাসপাতাল চালাতে হলে একজন সুদক্ষ মানুষের দরকার হয়। আগের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর আমরা নয়ন ভাইকে অনুরোধ করেছি যেন তিনি আমাদের সঙ্গে থাকেন। তিনি না থাকলে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে বেগ পোহাতে হবে। অতীতে কিছু অংশীদার যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় অংশীদারিত্ব হারিয়েছেন, তারাই এখন নয়ন ভাইয়ের নামে এসব ভুল মেসেজ ছড়াচ্ছেন।