ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যত্রতত্র চলছে ব্যাটারিচালিত ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও তিন চাকার যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে মহাসড়কে দ্রুতগামী বড় যানবাহনের ধাক্কায় ওইসব তিন চাকার যান দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকা নিষিদ্ধ তিন চাকার অবাধ চলাচলে ঘটছে প্রাণহানিও। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, তিন চাকার নিষিদ্ধ যানের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। এসব যান আটক ও মামলাও হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপর ২০১৯ সালে উচ্চ আদালত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০ জেলার মহাসড়কে তিন চাকার বাহন না চালানোর নির্দেশ দেয়। যার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মহাসড়কে তিন চাকার যান নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সরকারি ওই নিষেধাজ্ঞা এখন ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ অবস্থা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ১০৬ কিলোমিটার অংশে দুই পাশে ২৮২টি ফিডার রোড, ২২টি বাজার, ৫৬টি শিল্প কারখানা, ৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ২০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। বিশেষ করে বাজার, শিল্প কারখানা, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও হাসপাতালে সহজে যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ মহাসড়কে তিন চাকার যান ব্যবহারে অভ্যস্থ হয়ে ওঠেছেন। মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন অংশ ঘুরে ও খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কে বর্তমানে অবাধে চলছে সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে কেন তিন চাকার বাহন ব্যবহার করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অনেক যাত্রীই জবাবে বলেছেন, মহাসড়কের পাশেই বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় এসব জায়গায় যাতায়াতের সুবিধার্থে তিন চাকার যানবাহন ব্যবহার করছেন। এছাড়া এসব জায়গায় যাতায়াতে অন্য পরিবহন থামে না। তিন চাকার বাহন ছাড়াও যাত্রীরা আরেকটি ঝুকিপূর্ণ বাহন ফিটনেসবিহীন ‘দরজাখোলা’ মারুতি বা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে থাকেন। যাত্রীদের দাবি, মহাসড়কের পাশে সার্ভিস লেন করা হলে প্রয়োজনীয় এসব জায়গায় নিরাপদে যাতায়াত করা যেত, আর এতে দুঘর্টনার ঝুঁকি কমে আসবে।
ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে চলাচলকারি তিন চাকার বাহনের চালকরা জানায়, বিভিন্ন সংযোগ সড়ক দিয়ে তারা মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন নিয়ে ওঠেন। অনেক সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মামলা দিয়ে দেয়। তারপরও মহাসড়কে ওঠেন যাত্রীদের সুবিধার জন্য। কারণ অনেকে বাজার, হাসপাতাল, আশপাশের স্কুল মাদরাসায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশা, মিশুক বা সিএনজিচালিত অটোরকিশায় ওঠেন। এসব জায়গায় যাওয়ার জন্য অন্য কোন রাস্তা নেই। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে, মারাও যায়, এরপরও যাত্রীদের জন্য আর নিজেদের পেটের দায়ে মহাসড়কে ওঠতে হয়।
এদিকে মহাসড়কে চলাচলকারি দ্রুতগামি বাস, ট্রাক, লরির চালকরা জানান, তিন চাকার যানের যন্ত্রণা তারাও পোহাচ্ছেন। হঠাৎ করে মহাসড়কে ওঠে পড়ে এসব যান। তখন বড় গাড়ী হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় সড়কে পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। তখনও দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। আর দুর্ঘটনা ঘটলে যত দোষ বড় গাড়ির চালকের। এসব তিন চাকার নিষিদ্ধ যান রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় বড় গাড়ী খাদে পড়ে যায়, বা উল্টে যায়। তখনও দোষ হয় বড় গাড়ির চালকের। ওইসব নিষিদ্ধ যানরে ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হওয়া উচিত।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. খায়রুল আলম জানান, হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কের প্রতিটি এলাকায় সক্রিয়। তিন চাকার নিষিদ্ধ যানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে। পুলিশ কখনো কখনো এসব নিষিদ্ধ যান আটক করছে এবং মামলাও দিচ্ছে। মহাসড়কে শৃঙ্খলারক্ষা, অবৈধ যান চলাচলে কঠোর ভূমিকা এবং যানজট নিরসনে প্রতিনিয়ত হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।
Last Updated on January 12, 2025 12:08 pm by প্রতি সময়