-গ্রেফতার শাহজালালের আদালতে জবানবন্দি" />
প্রায় ৬ বছর পর কুমিল্লার চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র আবদুল্লাহ আল ফরহাদ ওরফে রিফাত হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা। এর আগে মামলাটি তদন্ত করে থানা পুলিশ ও সিআইডি।
নির্মম হত্যার শিকার কলেজ ছাত্র রিফাত কুমিল্লা সদর দক্ষিন উপজেলার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত মিজানুর রহমানের পুত্র।
রিফাতকে হত্যার পর ঘাতকরা তার মোটরসাইকেলটি শাহজালাল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বিক্রির জন্য ভারত সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেয়। শাহজালাল কুমিল্লার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রেজাউলের সহযোগী। হত্যাকান্ডে অংশ নেয়াদের মধ্যে চৌয়ারা এলাকার নাছির উদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান রানা এ মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও পরে জামিন বেরিয়ে দেশের বাহিরে চলে গেছে।
সিআইডি এ মামলায় ফাইনাল রিপোট দিলে আদালত তা গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্ত দেয় পিবিআইকে। অবশেষে দীর্ঘ ৬ বছর পর ক্লুলেস এ মামলার রহস্যের জট উদঘাটন করে পিবিআই কুমিল্লা।
গ্রেফতাকৃত আসামী শাহজালাল বুধবার আদালতে হত্যাকান্ডের বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী দিয়েছে। তবে কি কারণে রিফাত খুন করা হয়েছে তা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে পিবিআই।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক হিলাল উদ্দিন,পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মতিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পিবিআই কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি প্রায় ৬ বছর আগের। গ্রেফতার হওয়া শাহজালালএ বিষয়ে আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে তদন্তে আরও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ‘আধিপত্য কিংবা পূর্ব শক্রতা’ কিংবা তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ এ ৩ টি বিষয় সামনে রেখে আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্তে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া এবং নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা সবাইকে শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৯ মার্চ সদর দক্ষিণ উপজেলার ধর্মপুর এলাকার সোনাইছড়ি খালে রিফাতের মস্তক বিহীন লাশ পাওয়া যায়। পরে পাশে পাওয়া যায় মস্তক। সে ওই উপজেলার পশ্চিম জোড়কানন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ভানীপুর গ্রামের মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে এবং স্থানীয় চৌয়ারা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
এ ঘটনায় তার মা জোসনা বেগম বাদী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটির প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে নাছির ও রানা নামের দুইজনকে গ্রেফতার করলেও রহস্য বের করতে না পারায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্ত করে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সর্বশেষ গত বছরের ৬ অক্টোবর বাদীর আবদনের প্রেক্ষিতে আদালত অধিকতর তদন্তে পিবিআই কুমিল্লাকে দায়িত্ব দেয়।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক হিলাল উদ্দিন বলেন, মস্তক বিহীন লাশ উদ্ধার হওয়া রিফাত হত্যা মামলাটি বেশ চাঞ্চল্যকর। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমর মজুমদার ও পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের দিকনির্দেশনায় তদন্তে রহস্য উদঘাটনসহ এরই মধ্যে ইতিবাচক অনেক তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। রিফাতের মোটরসাইকেল ভারতে বিক্রির সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) চৌয়ারা পুরান বাজার এলাকা থেকে শাহজালাল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সে একই উপজেলার চৌয়ারা ধনপুর গ্রামের সফিক মিয়ার পুত্র।
বুধবার আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে শাহজালাল জানায়, সে রিফাত হত্যায় জড়িত ছিল না, তবে হত্যাকান্ডের পর নাছির উদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান রানা খুন হওয়া রিফাতের মোটরসাইকেলটি তাকে দেয় এবং তা ভারতে জামাল নামের এক ব্যক্তির নিকট বিক্রির কথা বলে।
প্রাথমিকভাবে নাছির ও রানা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে শাহজালাল আদালতে জবানবন্দী দিলেও এ হত্যাকান্ডে নেপথ্যে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও রিফাত হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রেজাউল করিমকে শোন এরেষ্ট দেখানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।রিফাততের মা ও মামলার বাদী জোসনা বেগম জানান, রিফাতের বাবার মৃত্যুর পর ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। অনেক কষ্টে তাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে ছিলাম। কেন আমার সন্তানকে খুন করা হলো ? ছেলে হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে ৬ বছর সহায়-সম্বল সব শেষ করে ফেলেছি। ভয় হচ্ছে ছেলের মতো অন্য দুই ছেলেসহ আমাকেও জীবন দিতে হয় কিনা।
এদিকে স্থানীয়রা জানায়, রিফাতে হত্যাকান্ডে জড়িত নাসির উদ্দিন চৌয়ারা এলাকার গোয়ালমথন গ্রামের খালেক মিয়ার পুত্র এবং মোস্তাফিজুর রহমান রানা একই এলাকার বানীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের পুত্র। বর্তমানে দুইজনেই বিদেশে অবস্থান করছে। অপরদিকে গ্রেফতারকৃত আসামী শাহজালাল সন্ত্রাসী রেজাউলের সহযোগী। রেজাউলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলাসহ প্রায় ৩ ডজন মামলা রয়েছে। গত ১৮ জুন সন্ধ্যায় গোলাবাড়ি সীমান্তে স্থানীয়দের সহায়তায় বিজিবির হাতে অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেফতার হয় রেজাউল।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on July 15, 2021 10:34 pm by প্রতি সময়