কুমিল্লার প্রবাসী অধ্যুসিত এলাকা আদর্শ সদরের কালিরবাজার ইউনিয়ন।এখানকার গ্রামগুলোতে করোনা মহামারী ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। নমুনা টেস্ট করালেই পজিটিভ।
এক সময় কালিরবাজার ইউনিয়নের গ্রামের মানুষের অসুখ-বিসুখে পল্লী চিকিৎসক ভরসা হলেও করোনার ভয়াবহতায় গ্রামের মানুষদের কেউ ছুটছেন শহরে। কেউ সরাপন্ন হচ্ছেন এলাকার সন্তান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের কোভিড ইউনিটের চিকিৎসক ডা.শাহাদাত হোসেন ও ইষ্টার্ণ মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমানের কালিরবাজার চেম্বারে। এই দুই চিকিৎসক এখন এলকাবাসীর চিকিৎসা সেবা দিতে সরাসরির চেয়ে টেলিমেডিসিনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এদিকে করোনাকালে অক্সিজেন সেবা দিয়ে মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে কালির বাজার ইউনিয়নের এলাকার যুব সমাজ, ব্যবসায়ী, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রবাসীসহ বিত্তবানরা। মহামারীর এই ক্রান্তিলগ্নে ইউনিয়নে তিনটি ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক চালু করেছেন তারা। ফোন পেলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে করোনা আক্রান্তদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। মানবতার কল্যাণে করোনাকালের এই দু:সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা।
স্থানীয়রা জানান, অক্সিজেন সংকটে ঈদের আগে মারা যায় কমলাপুর গ্রামের প্রবাস ফেরত যুবক মো. ইউনুছ মিয়া, ভল্লবপুর গ্রামের জামাল হোসেন,ধনুয়াখলা গ্রামের লিটন সহ এলাকার বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগী।
নিজেদের ইউনিয়নে করোনার এমন থাবায় আর চুপ করে থাকতে পারেনি এলাকার সচেতনরা। এলাকার যুব সমাজ উদ্যেগী হয়ে গঠন করে অক্সিজেন ব্যাংক। এগিয়ে আসে এলাকার বিত্তবানরা। সহযোগীতার হাত বাড়ায় প্রবাসীরা। বর্তমানে স্বেচ্চাসেবী সংগঠন ‘মানবিক কালিরবাজার’, ‘কালিরবাজার ব্লাড ব্যাংক’, ‘বেগম করফুলেরন্নেছা ফাউন্ডেশন’, ‘আবুল কালাম ফাউন্ডেশন’ শিল্পপতি আলহাজ¦ মো.নুরুল ইসলাম,ব্যবসায়ী আবুল বাসার ভূইয়া বশির সহ বেশ কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তি ও ফাউন্ডেশন করোনায় আক্রান্তদের অক্সিজেন সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
কেবল তারাই নয়, একাজে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন সৌদি প্রবাসী আনন্দপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম রিপন, আমেরিকা প্রবাসী ইফতেখার আলম চপল, কাতার প্রবাসী দেলোয়ার, কালিরবাজার এলাকার প্রবাসী যুবক কামরুল হাসান রফিক,লোকমান,বাসার ও সফিকসহ বেশ কয়েকজন। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জনকল্যাণমূখী কর্মকান্ড এলাকায় প্রসংশনীয় হয়ে উঠেছে।
এদিকে পাশের বরুড়া উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের যুবসমাজ এলাকায় অক্সিজেন ব্যাংক গঠন, ভ্যাক্সিন নিবন্ধন, করোনামুক্ত থাকার নানান উপায় নিয়ে গণ সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
ভল্লবপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. নূরুন্নবী সিদ্দিক , কালিরবাজারের পল্লী চিকিৎসক ডা. মীর আহাম্মেদ ও কমলাপুর গ্রামের ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাস অত্যন্ত ভয়াবহরূপে কালিরবাজারের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশের বরুড়া উপজেলার আগানগর ইউনিয়নে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে এ দুই এলাকার অর্ধশতাধিক করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও বেডের ব্যবস্থা করতে না পেরে বাসা বাড়িতে অবস্থান করছে অসংখ্য করোনা আক্রান্ত রোগী। যথাযথ চিকিৎসা সেবা ও অক্সিজেন সংকটে এলাকায় বিরাজ করছিল চরম উৎকণ্ঠা। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে করোনা রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন সেবাসহ নানান সেবা নিয়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কালীর বাজারের এক সময়ের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ মরহুম ইব্রাহিম কন্ট্রাক্টরের ছেলে ‘মানবিক কালীর বাজার’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রেজাউল করিম মিঠু ও মেহেদী হাসান রিমন। এছাড়াও ‘কালীর বাজার ব্লাড ব্যাংক’ এর সদস্যরা এলাকার বিত্তবানদের সহযোগীতায় ফান্ড গঠন করে আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় সেবা দিতে দিবারাত্র কাজ করে যাচ্ছে।
এসব কাজে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শিল্পপতি আলী আকবর ও ধনুয়াখলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি আলহাজ¦ মো. নূরুল ইসলাম। তাঁদের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম করফুলেনেছা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তারা এলাকায় অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া করোনা মহামারীর শুরু থেকে এ ফাউন্ডেশন কর্মহীন অসহায়দের মাঝে খাদ্য সহায়তা সহ সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে আসছে।
ইউনিয়নের বেলুনগর গ্রামের কৃতি সন্তান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের কোভিড ইউনিটের চিকিৎসক ডা.শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের কালিরবাজার এলাকায় রোগী ছিল হাতে নেহাতই কম। বর্তমানে কালিরবাজার ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে করোনা রোগী রয়েছে। প্রতিদিনই সরাসরি ও টেলিফোনে কমপক্ষে ২০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হচেছ। সাধারণ মানুষের অচেতনতার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।শুধু চিকিৎসা দিয়ে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব নয়। সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে সরকারি বিধি নিষেধ মেনে ঘরে থাকতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে,টিকা নিতে হবে। জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,মসজিদের ইমামসহ সমাজের সচেতন মহলকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
কালিরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. সেকান্দর আলী বলেন, কালিরবাজারের সচেতন যুব সমাজ ও প্রবাসীরা চলমান করোনা সংকটে এগিয়ে এসেছে। যুবকরা মানুষের বিপদ আপদে ডাক পেলে ছুটে যান। মানবিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের এ কাজে আমি ও আমার পরিবার সব সময়ই যেকোনো সহযোগিতা পাশে রয়েছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on July 28, 2021 9:50 pm by প্রতি সময়