ছবি: পতিত জমিতে পুষ্টিবাগান করা একটি কৃষক পরিবার #
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষিপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক। করোনা প্রাদুর্ভাবে অনেকটা থমকে গিয়েছিলেন।কিন্তু তাকে মানসিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলার পথ দেখিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস। কেবল আবদুর রাজ্জাকই নয়, ব্রাহ্মণপাড়ার অসংখ্য কৃষক এখন পারিবারিক পুষ্টিবাগান করে সবজি উৎপাদনে স্বয়ং সম্পন্নতা অর্জনের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।পুষ্টিবাগান বদলে দিচ্ছে এখানকার কৃষকের দিনকাল।
করোনা মহামারি,বন্যাসহ নানা আপদকালীন সময়ে যেন আমাদের দেশে সবজি উৎপাদনে কোন প্রভাব না পড়ে সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক দূর্যোগ মোকাবেলায় দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্নতা ধরে রাখতে প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী স্থাপন করা হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টিবাগান।
কুমিল্লার কৃষিনির্ভর উপজেলাগুলোর মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়ায় নানারকম অর্থকরী ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে।আর এখানেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে পারিবারিক পুষ্টিবাগান। এখানকার বসত বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান।
ব্রাহ্মণপাড়ায় উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দেশ যখন লকডাউনে ছিল তখন সবজি সরবরাহ ও উৎপাদনসহ নানা বিষয়ে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়াও সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যায় সবজি খেত নষ্ট হয়েছে। সেই সংকট আগামীতে যেন বড় আকার ধারণ না করে সেই লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের ফেলে রাখা বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে আসছে।উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৫৬ জন কৃষকের বাড়িতে এই পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরির করেতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তাগণ।
পারিবারিক পুষ্টিবাগান করা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষিপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাগান তৈরির খরচ হিসেবে সরকারের কাছ থেকে ১৯৩৫ টাকা পেয়েছি। বাগান থেকে উৎপাদিত সবজি দিয়ে একদিকে যেমন আমার পারিবারিক সবজির চাহিদা মেটাতে পারছি অন্যদিকে অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আমার বাড়তি অর্থ আয় হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুল হাসান বলেন, ‘কৃষকরা তাদের পুষ্টি বাগানে উৎপাদিত নানা রকমের বিষমুক্ত সবজি দিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বাজারজাত করে বাড়তি অর্থও আয় করছেন। যার কারণে আপদকালীন সময়ে উপজেলায় কোন প্রকারের সবজির সংকটের সৃষ্টি হবে না। আমরা প্রথমে কৃষকদের উব্ধুদ্ধ করেছি। এই বাগানের উপকারিতা সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করেছি।আমরা প্রতিটি বাগানের জন্য ঢেড়শ, ধনিয়া, লাউ, সিম, ডাটা, চিচিংগা, পুইশাক, কলমি শাক, লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক ও করল্লা সহ ১৫ প্রকারের সবজির বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি।’
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কৃষক ও কৃষিপ্রিয় পরিবারের মাঝে এই পারিবারিক পুষ্টি বাগান ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আশা রাখি আগামীতে এ উপজেলার প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি হবে একটি করে পারিবারিক পুষ্টিবাগান। এতে করে উপজেলায় যেকোন আপদকালীন সময়ে সবজি সংকট সৃষ্টি হবে না বলে আশি আশাবাদি।’
# দেশ–বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on September 3, 2020 5:45 pm by প্রতি সময়