সন্তান।পিতা-মাতার কাছে এক অমূল্য সম্পদ।সন্তানের সুখে যেমন পিতা-মাতারা খুশি হয় তেমনি সন্তানের কষ্টে, অসুখ-বিসুখে সবচে বেশি উদ্বিগ্ন আর দিশেহারা হয়ে উঠেন পিতা-মাতারা। ভূমিষ্টের পর আদর মমতায় বেড়ে উঠা, পড়ালেখা করিয়ে সমাজে আর্দশ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন পুরণের সময়ে সন্তান যদি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে ওই সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে পিতা-মাতার প্রাণপন চেষ্টা থেমে থাকে না।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের একটি মসজিদে ইমামের দায়িত্বে নিয়োজিত মাওলানা রুহুল আমিন তার সন্তান কুরআনে হাফেজ রাশেদুল ইসলামকে সুস্থ করে তোলার জন্য চিকিৎসাযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাফেজ রাশেদুল প্রায় তিন বছর ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত । ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন পড়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এলাকাবাসী ও হৃদয়বান মানুষদের সহযোগিতায় ১৬ লাখ টাকা যোগাড় করে ছেলের চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে নিয়ে যান।সেখানকার একটি হাসপাতালে হাফেজ রাশেদুলের চিকিৎসা চলছে।
এরিমধ্যে চিকিৎসা খরচের জন্য প্রয়োজন পড়ে আরও চার লাখ টাকা। এই টাকার যোগান দিতে এবার কোথায় হাত পাতবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না সামান্য বেতনে ইমামতির চাকরি করা মাওলানা রুহুল আমিন।বার বার কী মানুষের দুয়ারে যাওয়াটা মানায়? এমন ভাবনায় সন্তানের শেষলগ্নের চিকিৎসাখরচ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন মাওলানা রুহুল আমিন।
আর এমন খবরটি জানতে পেরে কোরআনে হাফেজ রাশেদুলের চিকিৎসা খরচের জন্য দুই লক্ষাধিক টাকার সহযোহিতা নিয়ে এক অসহায় পিতার পাশে দাঁড়াল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্ট।
সোমবার (২৯ মার্চ) বিকেলে সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হাফেজ রাশেদুলের চিকিৎসার জন্য তার বাবা মাওলানা রুহুল আমিনের হাতে তুলে দিলেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫শ টাকা।সন্তানের চিকিৎসার শেষপ্রান্তের এক কঠিন সময়ে দুই লক্ষাধিক টাকার মানবিক সহায়তা পেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন মাওলানা রুহল আমিন।
তিনি বলেন, ‘সন্তানের চিকিৎসার জন্য শুরু থেকেই মানুষ আমাকে সহযোগিতা করছে।ছেলেটা আমার ভারতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভেবেছিলাম যে ১৬ লাখ টাকা সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছিলাম, এটা দিয়েই চিকিৎসার খরচ সেরে যাবে। কিন্তু আরও টাকার প্রয়োজন পরায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ আমার সহায় হয়ে মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্টের সাহায্যকে কবুল করে এই দু:সময়ে আমার হাফেজ ছেলেটার পাশে দাঁড়ানোর জন্য পাঠিয়েছেন।আমি সবার জন্য দোয়া করি। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্টের প্রত্যেকের জন্য আমার দোয়া রইলো।আল্লাহ তাদের সবাইকে ভালো রাখুক, অসহায় মানুষের মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার তৌফিক দান করুক।’
মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্টের সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ‘অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর সংকল্প নিয়েই মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্টের পথ চলা শুরু। হাফেজ রাশেদুলের চিকিৎসার জন্য তার বাবার হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছি। একজন কোরআনে হাফেজের জন্য কিছু করতে পারছি বলে খুব ভালো লাগছে। হাফেজ রাশেদুলকে সুস্থ হয়ে পরিবারের মাঝে ফিরে আসুক, এই দোয়া করি।’
অনুদান তুলে দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন- মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মাহাদি মোহাম্মদ মাহিদ, সমাজসেবক হাজী মোসলেহ উদ্দিন, সাংবাদিক সৈয়দ আহমেদ লাভলু, হাজী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, হাজী মোঃ আবুল হাশেম, নবী নেওয়াজ মাষ্টার, আবুল হাশেম, আলী আশ্রাফ, মিথলমা সমাজ কল্যান ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ জাকির হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির বিন আশরাফসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকজন।
Last Updated on March 29, 2021 9:12 pm by প্রতি সময়