কুমিল্লায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান এবং জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান। তারা জানিয়েছেন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় সন্ত্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কেন্দ্র এবং পুলিশ সপুার কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে পৃথক ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের নির্বিঘ্ন পরিবেশের কথা জানান তারা।
নির্বাচনের একদিন আগে কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং একটি কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর ভোটাররা কতোটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পাবে?- এমন প্রশ্নে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, ভোটারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। আর সেই প্রস্তুতি আছে বলেই নাশকতার চেষ্টাকারীরা ধরা পড়েছে। নাকশতা করতে এসে একজন মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়েছে, সে কিন্তু এটা ইচ্ছা করে রেখে যায়নি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহনী এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ তাৎক্ষণিক সেখানে গিয়েছেন এবং তারা পালিয়ে গিয়েছে। পরে গ্রেফতার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যদি কেউ ঘটাতে চায়, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কুমিল্লায় ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পুলিশের প্রায় ৪ হাজার সদস্য ভোটকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবেন। আনসার ব্যাটালিয়ানের সসস্ত্র সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। একই সাথে বিজিবির ৩৩ প্লাটুন কুমিল্লায় নিয়োজিত আছেন। র্যাবের ২২টি টহল টিম তারাও ১১টি সংসদীয় আসনে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। গত ৩ তারিখে সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লায়ও সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। তারাও ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের চৌকশ সেনাবাহিনীর সদস্যবৃন্দ কুমিল্লায় দায়িত্ব পালন করছেন।
রিটার্নিং অফিসার বলেন, নির্বাচনে কুমিল্লায় ২৮ জন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য আরো ২৭ জন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৫ তারিখ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা এ দায়িত্ব পালন করবেন। একই সাথে ২৫ জন বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।নির্বাচনে কুমিল্লায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এবং সরব উপস্থিতির মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা কুমিল্লাবাসীকে উপহার দিতে পারবো।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, যারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে, তারা নাশকতা করার চেষ্টা করবে সেটাকে মাথায় নিয়েই আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তার প্রমাণও আমরা রাখতে পেরেছি। তারা যখন শুক্রবার রাতে নাশকতা ঘটনাকে চেষ্টা করেছে, আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে- আমরা কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকে ধরতে পেরেছি। যেভাবে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছি, জেলা পুলিশ, বিজিবি র্যাব, সেনাবাহিনী এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন আছে। আমাদের সক্ষমতা আছে, অফিসারদের ওইভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করবো, সর্বক্ষণ দৃশ্যমান থাকবো। যাতে করে ভোটাররা নির্বিঘ্নে-নিরাপদে আসতে পারে। আমরা সেই পরিবেশ নিশ্চিত করবো, ইনশাল্লাহ।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লার ১১টি আসনে বিভিন্ন দলের ও স্বতন্ত্র থেকে মোট ৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। জেলার ১১টি আসনে মোট ভোটার ৪৬ লাখ ৬১৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ লাখ ৬৬২৬৪, নারী ভোটার ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৯০৬জন। এছাড়াও ২৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। জেলা মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৩৫টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৯৩৮৮টি।
ভোটকেন্দ্রগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্র ৫০০টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৫৬৪টি এবং অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে ৩৭১টি। নির্বাচনে মোট ১৪৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পোলিং অফিসার থাকবেন ১৮ হাজার ৬০০ জন।
Last Updated on January 6, 2024 9:21 pm by প্রতি সময়