ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসসড়কের পাশেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমিল্লার নিমসার সবজিবাজার ঘিরে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। কৃষক পর্যায় থেকে খুচরা বাজারে আসতে সবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য তিন-চার হাত বদল হয়। এতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্য তিন-চার গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে লাভের সব টাকা চলে যায়। প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নানা পদক্ষেপেও ঠেকানো যাচ্ছে না মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য।
মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াও মৌসুমের সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কম মূল্যে কষকের কাছ থেকে পণ্য্য কিনে নিজেদের কাছে মজুদ রাখে। পরে তারা সেগুলো ধীরে ধীরে দাম বাড়িয়ে বাজারে ছাড়ে। কুমিল্লার নিমসার বাজারের সবজি আড়তদারদের হাতবদল হয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের কুমিল্লা শহর ও শহরতলীর বাজারগুলোতে এলে দামের পার্থক্য দাঁড়ায় তিন-চার গুণে। ফলে বাজারে সবজি বা অন্যান্য কৃষিপণ্য নিতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে সাধারণ ক্রেতাদের।
কুমিল্লার নিমসার বাজার ঘুরে জানা গেছে, এখানে দেশের উত্তারাঞ্চল ছাড়াও কুমিল্লা জেলার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, বরুড়া, চান্দিনা, লালমাই, সদরদক্ষিণ, দাউদকান্দি, ও আদর্শ সদর উপজেলার কৃষকরা কৃষিপণ্য নিয়ে আসেন। সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কুমিল্লা অঞ্চলের সবজি না থাকায় উত্তরাঞ্চলের জেলা রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নিলফামারী, ঠাকুরগাঁও, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সবজি এতদাঞ্চলের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে। তবে সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে এসব সবজি কয়েক হাত বদল হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌছাচ্ছে আকাশছোঁয়া দামে। বাজারে সবজি কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হাঁপিয়ে ওঠলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ঠিকই ভারি হচ্ছে।
কুমিল্লার নিমসার বাজারের বেশ ক’জন পাইকারি ব্যবসায়ি জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় কুমিল্লায় সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেকারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসা সবজিতে এখানকার চাহিদা মেটানো হচ্ছে। কৃষকের জমি থেকে সবজি বা অন্যন্য কৃষিপণ্য কুমিল্লার বৃহৎ সবজি বাজার নিমসারে আসতে ক্ষ্রদ্র মধ্যস্বত্বভোগী থেকে শুরু করে তিন-চার প্রকারের মধ্যস্বত্বভোগী হাতবদল হয়। এরপর আড়তে আসার পর এখানেও দালাল বা ফড়িয়া চক্র রয়েছে। এসবের পর আড়তদাররা দাম নির্ধারণ করে পাইকারি ব্যবসায়িদের কাছে একরকম দামে আবার খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে আরেকরকম দামে বিক্রি করছেন। সবজি বা কৃষিপণ্য নিয়ে এতোসব কাহিনীর পর বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের হাত ধরে সাধারণ মানুষের কাছে সবজি পৌঁছে কয়েকগুণ বেশি দামে।
কুমিল্লা শহরের রাজগঞ্জ, চকবাজার, রানীর বাজার, নিউমার্কেট, টমছমব্রীজ বাজার, বাদশা মিয়ার বাজার, মগবাড়ি চৌহমুনী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি বাজারেই সিন্ডিকেট রয়েছে। প্রতিদিন সবজির দাম কী হবে এটা সিন্ডিকেট নির্ধারণ করে দেয়। কেউ নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে বিক্রি করতে পারবে না। খুচরা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এদিকে নিমসার বাজারের কয়েকজন আড়তদার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়িরা কিনে নিয়ে স্থানীয় বাজারে খেয়ালখুশি দামে সবজি বিক্রি করছে। অথচ প্রশাসন জরিমানা করে আড়তদারদের। সবজির বাজার মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন হয়। কিন্তু আড়তদাররা দামের পরিবর্তনের বিষয়টি লক্ষ্য রেখেই পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যে সবজি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে, এটা খুচরা বিক্রেতারা ৮০ থেকে ১০০টাকায় বিক্রি করছে। ক্রেতারা প্রতিবাদ জানালে বলে সিন্ডিকেটে দাম বাড়িয়েছে। সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই, খুচরা ব্যবসায়িরা পণ্যের ক্রাইসিস চলছে এসব বলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি নিচ্ছে। সব দোষ খুচরা বিক্রেতাদের।
জাতীয় ভোক্তাঅধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসেনের সহযোগিতায় নিমসার কাঁচাবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে তদারক অভিযান পরিচালনা করে আসছি। এ সময় ব্যবসায়ীদের ক্রয় রসিদ যাচাইবাছাই করে অযাচিত ও অতিরিক্ত দাম রাখার দায়ে জরিমানাসহ সতর্ক করা হয়। তাছাড়া বাজার মনিটরিংয়ে যদি অনিয়ম ধরা পড়ে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
Last Updated on October 28, 2024 3:39 pm by প্রতি সময়