শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:১৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
নোবিপ্রবির দশ শিক্ষকের গবেষণা প্রকল্প ইউজিসির অনুদান পেল মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের চেতনাকে ধারন করে এগিয়ে চলছে দৈনিক আজকের দর্পণ #:কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন ঈদে মিলাদুন্নবী সা. উদযাপন কী এবং কেন উসাবের নেতৃত্বে অন্তর ও জাবেদ অস্ত্র গুলিসহ ঠাকুরপাড়া মুরাদপুর ও চর্থার চার যুবক গ্রেফতার শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের পথে : অর্থমন্ত্রী চট্টগ্রামে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য জশনে জুলুস # ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত তাল গাছে উঠে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে প্রাণ গেল শ্রমিকের লাকসামে ফুলসজ্জিত গাড়িতে চড়ে অবসরে গেলেন শিক্ষক   দাউদকান্দিতে কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনায় চারজন গ্রেফতার কুমিল্লা নগরীতে বসুন্ধরা ও কিউর ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা বিদেশি পিস্তলসহ সদর দক্ষিণের বুলেট গ্রেফতার বুড়িচংয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও পাইপলাইন বিছিন্ন চান্দিনায় নিখোঁজের পরদিন পুকুরে ভেসে উঠলো মাদরাসা ছাত্রের লাশ হাজিরা দিলেন রিজভী, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে পেছালো চার্জ গঠনের তারিখ প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম চান্দিনায় কথিত চক্ষু চিকিৎসককে ভ্রাম্যমান আদালতে এক মাসের কারাদণ্ড নাঙ্গলকোটে অভিযানের খবর শুনে সড়ক থেকে লাপাত্তা অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা বরুড়ার কৃষক সাত্তার হত্যা মামলার ৫ আসামি গ্রেফতার মেঘনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যায় ২৪ জনের নামে মামলা

মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন শোভা পাচ্ছে গাজীপুরে

মো. দেলোয়ার হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর
  • আপডেট টাইম রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩২৯ দেখা হয়েছে

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে ‘মডার্ণ এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন’ নামের একটি ফার্মে।রসে ভরপুর, মিষ্টি ও সুস্বাদু এই ফল বাংলাদেশের মাটি ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে খাপখাইয়ে নিয়েছে। এ দেশের তাপমাত্রায়ও মরু তাপমাত্রার ফল ত্বীন মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে।মরুভূমির মিষ্টি ফল আত ত্বীন চাষে বাংলাদেশের অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ বাড়ির ছাদবাগানেও এই ফল চাষ করছেন। মরুভূমির এই ফল এখানকার আবহাওয়া সহ্য করতে পারছে এটা মহান আল্লাহর অশেষ রহমত বলে অনেকেই মনে করছেন।

বিভিন্ন রঙের ত্বীন ফলের ফলনে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা এলাকার আজম তালুকদার। তার মডার্ণ এগ্রো ফার্ম এন্ড নিউট্রিশন’ নামের ফার্মটি আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ত্বীন ফলের বাগান। এই ফল চাষে ব্যাপক সফলতা দেখে দেশের অনেকেই এখন আত ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

শ্রীপুরের এই ফার্ম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে ত্বীন ফল ও এর চারা। দিনদিন চাহিদা বাড়ার কারণে কর্তৃপক্ষ ফার্মটির সম্প্রসারণ করে এই ফলগাছের চারা উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম বাবু জানান, বারতোপা এলাকায় ৭ বিঘা জমিতে ত্বীন ফলের চাষ করা হয়েছে।

মাদার প্ল্যান্ট (মুল গাছ) থেকে তৈরি করা কলমের ৩ মাস বয়স থেকে ফল দেয়া শুরু করে। ফল ধরার ১ সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে ন্যুনতম ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে।

সারা বছরই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ ছয় থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। খোলা মাঠ ছাড়াও টবের মধ্যে ছাদবাগানে ত্বীন চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। ছাদ বাগানের চাষীদের মধ্যেও এর ব্যাপক চাহিদা দেখা গেছে।

ত্বীণ ফল ও গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে ৭টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ। এখান থেকে কলম তৈরি করে এর নিজেদের প্ল্যান্ট ছাড়াও চাষিদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতাসহ ভোজন রসিকরা এখান থেকে ত্বীন কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ কেজি ত্বীন ফল বিক্রি হচ্ছে। যার প্রতিকেজির মূল্য ১ হাজার টাকা।

ফলের পাশাপাশি সৌখিন চাষিরা এখান থেকে চারাও কিনে নিচ্ছেন। দুইমাস বয়সী চারার পাইকারি মূল্য ৫২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৭২০ টাকা। এখান থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় টবসহ ফল ধরা চারা বিক্রি হচ্ছে। ত্বীন গাছে রোগ-জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা একদমই কম।

সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত। ডুমুর জাতীয় এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Ficus carica ও পরিবারের নাম moraceae. ফলটি পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে বলে জানান পারভেজ আলম বাবু।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মো. আজম তালুকদার জানান, ২০১৪-২০১৫ সালে তিনি থাইল্যন্ড থেকে জীবন্ত গাছ এবং তুরস্ক থেকে ত্বীন গাছের কাটিং নিয়ে আসেন। পরে নিজস্ব প্রোপাগেশন সেন্টারে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আদ্রতা বজায় রেখে বারতোপা এলাকায় ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও আবাদ শুরু করা হয়। প্রতিটি গাছে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭/১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫/৪০কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে ক্রমবর্ধিত হারে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে থাকে।

গাছটির আয়ু হলো প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিটি পাতার গোড়ায় গোড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে। ত্বীন একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা মরু অঞ্চলে স্বাচ্ছন্দ্যে জন্মায়। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। ত্বীন কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কম্পোজড সার মিশিয়ে রোদে মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ফল উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে। তাই ছাদবাগানীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

আজম তালুকদার আরও বলেন, দেশে ছাড়াও বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ও জাপান আমাদের কাছে ত্বীন ফলের চাহিদার কথা জানিয়েছে। ত্বীন চরম জলবায়ু অর্থাৎ শুষ্ক ও শীতপ্রধান দেশে চাষ হলেও, প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও ৩৬৫ দিনে ফল উৎপাদন সম্ভব। বিদেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। এ ফল আমাদের দেশে সারা বছর পুষ্টি ও ফলের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, গার্মেন্টসের বিকল্প আরেকটা সম্ভাবনা দেখছি, সেটি হলো বাংলাদেশে ব্যাপক ত্বীন চাষ। সরকারের সহযোগিতা পেলে তা রপ্তানি করে আন্তর্জাতিকভাবে বাজার ধরা সম্ভব। ত্বীন একটি সম্ভাবনাময় ফসল, যা চাষ করে দেশের বেকরাত্ব দূর এবং রপ্তানি করে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আজম তালুকদার আরও জানান, ত্বীন ছাড়াও গাজীপুরে তার বাগানে বিচি ছাড়া পেপে, আঠা ও বীজহীন কাঁঠাল, জৈতুন, চেরি, আপেল ও মাল্টাসহ বিদেশি অনেক ফলগাছের চারা উৎপাদন ও তা সম্পসারণের কাজ চলছে। তাদের সংগ্রহে ত্বীন ফলের ১০৩টি জাত রয়েছে। তবে ছয়টি জাত তারা এখানে চাষাবাদ করছেন। জাতগুলোর ফল নীল, মেরুন, লাল ও হলুদসহ বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এখানকার গাছে প্রতিটি ত্বীন ফল ওজনে ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার ছাদবাগান চাষী মো. আক্রাম হোসেন জানান, ফলটির অনেকে গুণের কথা শুনে শখ করে আমি ছাদবাগানে অন্য গাছের সঙ্গে সৌদি আরবের ত্বীন ফলের চারা টবে লাগিয়েছি। দুইমাস বাদেই ফল আসা শুরু হয়। পাকা ফল খেতে বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি। এ গাছে তেমন রোগবালাই নেই। ফলনও ভালো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচাইতে বড় শ্রীপুরের ত্বীন ফলের প্রজেক্টটি। বাণিজ্যিকভাবে এতো বড় পরিসরে ত্বীন চাষ দেশের কোথাও করা হয়নি। আমরা এই প্রকল্পটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও বিদেশ থেকে ত্বীনের আমদানি নির্ভরতা কমে আসার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এ ফলটি খুবই উপকারী। এছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালিসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ।

# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন।  এছাড়া protisomoy news ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন। 

Last Updated on November 1, 2020 4:53 pm by প্রতি সময়

শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও খবর...

বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।

themesba-lates1749691102