# যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছার প্রতিটি মুহূর্ত দুর্ঘটনা ঝুঁকিতে" />
নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, নেই সংকেত সম্পর্কে কোন স্বচ্ছ ধারণা, এক-দুই বছর হেলপারি করে এখন স্বল্প দুরত্বে চলাচলকারি লেগুনা, মারুতি, মেক্সি, ইমা, সুজকিসহ ফিটনেসবিহীন মিনি যানবাহনের চালকের আসনে নিয়মিত ড্রাইভার। ১৪-১৫ বছর বয়সী অনভিজ্ঞ শত শত কিশোর মহাসড়কে ওইসব বাহনের চালকের আসনে বসায় সাধারণ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছার প্রতিটি মুহূর্ত থাকে দুর্ঘটনা ঝুঁকিতে। মহাসড়কে অনভিজ্ঞ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই এধরণের যানবহনগুলোর কিশোর চালকরা এখন আতঙ্কের আরেক নাম।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরিপুর-ইলিয়টগঞ্জ থেকে ক্যান্টনমেন্ট, আলেখারচর এলাকা পর্যন্ত রুটে দিন দিন অনভিজ্ঞ লাইসেন্সবিহীন কিশোর চালকদের গাড়ীর স্টিয়ারিংয়ের হাল ধরার প্রতিযোগিতা বেড়ে চলছে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বাহন বন্ধ হওয়ার পর লেগুনা, মেক্সি ও লক্কর-ঝক্কর মিনিমাইক্রোবাস হরদমছে চলাচল শুরু করে। আর এসব বাহনের চালকের আসনে স্থান করে নেয় শিশু-কিশোররা। যাত্রীরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিশোর চালকের গাড়ীতে চড়ে বসেন। অথচ এমন চালকের হাতে স্টিয়ারিং উঠে আসায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিট নেই এমন সব বাহন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাত ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শত শত অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরিপুর থেকে ক্যান্টনমেন্ট, আলেখারচর, পদুয়ারবাজার এবং শহরের শাসনগাছা এলাকা পর্যন্ত হিউম্যান হলার-লেগুনা, লক্কর ঝক্কর মিনিমাইক্রোবাস, মেক্সি যাত্রী পরিবহন করছে। এধরণের ৪০ ভাগ যানবাহনেরই স্টিয়ারিং হাতে নিয়েছে কিশোররা। নামে মাত্র শিখে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই ওরা বসেছে চালকের আসনে। আবার কিশোর চালকদের হেলপার হিসেবেও যাত্রী উঠানো, নামানো ও ভাড়া আদায়ের কাজটি করছে শিশুরা। এসব কিশোর চালকের আনমনা স্বভাব প্রতিযোগিতা দিচ্ছে বড় যানবাহনের সঙ্গে। যখন তখন ব্রেক কষছে, আবার জোরে গাড়ী টান দিচ্ছে।
ওইসব যানবাহনের বেশক’জন মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়ক থেকে সিএনজি অটোরিকশা তুলে দেয়ার পর অনেকেই পুরাতন মাইক্রোবাস কেটে লেগুনা আদলের গাড়ী তৈরি করে রাস্তায় নামিয়েছে। আবার কেউ কেউ মেক্সি, সুজকি কিনে যাত্রীপরিবহন ব্যবসা করছে। বর্তমানে মহাসড়কে স্বল্প দুরত্বে যাত্রী চাহিদা বাড়ায় এসব যানবাহনের কদর বেড়েছে, তাই কিশোর চালকের সংখ্যাও বাড়ছে। কিশোর চালক আর কিশোর হেলপারকে স্বল্প বেতনে সন্তুষ্ট রাখা যায়। তাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের হাতে স্টিয়ারিং তুলে দেয়া হচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়াই এসব বাহন তারা চালাচ্ছে। সড়কে লাইসেন্স নিয়ে সমস্যা হলে সারিয়ে নেন মালিক বা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা মালিকপক্ষের এজেন্টরা।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন সবধরণের অবৈধ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবৈধ, নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধেও হাইওয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রায় সময় এসব যানবাহন আটক, মামলা এবং জরিমানা করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথারিটি (বিআরটিএ) কুমিল্লা সার্কেলের সহকারি পরিচালক মো. আবদুল মান্নান জানান, বর্তমানে সবধরণের যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রযুক্তিনির্ভর। নকল লাইসেন্স দিয়ে যানবাহন চালানোর সুযোগ নেই। আর যারা অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক তাদের পক্ষে তো লাইসেন্সকরার সুযোগই নেই। মহাসড়কে যেসব কিশোররা বিভিন্ন ফিটনেসবিহীন যানবাহন চালাচ্ছে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা প্রায়ই মহাসড়কে অভিযান ও প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে থাকি। তবে অভিযানের খবর শুনলে এসব বাহন ও কিশোর চালকদের মহাসড়কে আর দেখা যায় না। কিন্তু অভিযানে যারা ধরা পড়ে তাদের বিরুদ্ধে তো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।
নিরাপদ চালক চাই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আজাদ সরকার লিটন বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চালক অদক্ষ-অনভিজ্ঞ কিশোররা এমনটি ভাবতেই অবাক লাগছে। এসব কিশোররা যখন গাড়ির স্টয়ারিংয়ে বসে মহাসড়কের চলাচল করে তখন কী প্রশাসনের নজরে পড়ে না ? অদক্ষ কিশোর চালকের হাতে গারি স্টয়ারিং মানেই যাত্রীর জীবন ঝুঁকিতে। যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কেবল তাই নয়, সবধরণের যানবাহন সড়কে চলাচলের ফিটনেস সার্টিফিকেট, ইনস্যুরেন্সও রুট পারমিটের বৈধতা নিশ্চিত করাটাও জরুরী হয়ে পড়েছে।
Last Updated on December 1, 2023 4:14 pm by প্রতি সময়