পাসপোর্ট এনআইডি ও ভোটার তালিকাসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৯ ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের জন্ম সনদ প্রয়োজনের গুরুত্ব ব্যাপকহারে বেড়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে জন্ম সনদ পেতে স্থানীয় নাগরিকদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
কুমিল্লা জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা মুরাদনগরের ২২টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ জন্ম সনদ বিড়ম্বনায় পড়েছেন। জন্ম নিবন্ধন করাতে গেলেই বলা হচ্ছে সার্ভার নষ্ট, পরে আসেন। কেবল জন্ম সনদই নয়, মৃত্যুর সনদ প্রাপ্তিতেও সার্ভার জটিলতাকে ঘিরে ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন ও দালালের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। এমন অভিযোগেরও কমতি নেই।
জন্মসনদ প্রতিটি নাগরিকের প্রথম পরিচয় পত্র। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজন হচ্ছে জন্ম সনদের। জানা গেছে, কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার সকল ইউনিয়নে সার্ভার জটিলতায় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ নিতে হয়রানির শিকার হচ্ছে নাগরিকরা। ফলে অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুল-কলেজে ভর্তি এবং অনেকেই পেনশন, বিয়ে চাকরি, পাসপোর্ট, জমি বেচাকেনা সহ বিভিন্ন কাজে ভোগান্তিতে পড়ছেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ পেতে ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রতিনিয়ত ভিড় বাড়ছে।
এদিকে জন্ম নিবন্ধনে নাম, তারিখ, ঠিকানা বা বাবা-মায়ের নাম এসব ভুল সংশোধন করতে গিয়েও সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে দিনের পরদিন ধর্না দিয়েও পাচ্ছেন না সমাধান। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করাতে প্রয়োজনীয় কাগজ বা অভিভাবককে নিয়ে যেতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও। এতে বেশি বিপাকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মুরাদনগর উপজেলার ছালিয়াকান্দি, আকুবপুড় ও কামাল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহিন মিয়া, মরিয়ম, জামান জানান, তারা ছেলের জন্ম নিবন্ধন করানোর জন্য ১৫ দিন ধরে ইউনিয়ন অফিসে ঘুরছেন। কিন্তু সেখান থেকে তাদের বলা হয়েছে, সার্ভার জটিলতার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। পরে আসেন। আসলে সার্ভার তো আর সব সময় ডাউন থাকে না। মূলত দক্ষতার অভাবে তাঁরা নিবন্ধনের কাজ করতে পারছেন না। তাই মানুষকে সার্ভার ডাউনের অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ফলে অনেকেই নিজেদের প্রয়োজন সারাতে দালালের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছেন।
আন্দিকোট ইউনিয়নের রেহানা আক্তার বলেন, ‘স্কুলে ভর্তির জন্য আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধন ইংরেজি করানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গেলে আমাকে জানায় আমার নিবন্ধনও নাকি পরিবর্তন করা লাগবে। আমি বলেছি, আমার স্মার্ট কার্ডে যে তথ্য আছে সেটাই দিন। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বলা হচ্ছে আপনার জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে হবে। এরকম আজব কথা তো আর শুনিনি। এক দিকে বলে সার্ভার সমস্যা, আরেক দিকে হয়রানি। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে নানা নিয়ম নীতি। এগুলা সাধারণ মানুষকে হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। ইউনিয়ন পরিষদে যদি এই অবস্থা চলে তাহলে সেবাটা তৃণমূল মানুষের দোরগোরায় পৌঁছবে কিভাবে’ ? প্রশ্ন রাখেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
মুরাদনগর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সনদ শাখায় নিয়োজিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় জন্ম ও মৃত্যু সনদের বিষয় নিয়ে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, দিনের মধ্যে দেখা যায় একবার সার্ভার আসে বাকি সময় থাকে না। এতে কাজ করতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জনগণ মনে করে আমরা কাজ করছি না। কিন্তু সার্ভারের সমস্যা কেউ বুঝতে চায় না।
Last Updated on October 14, 2023 9:42 pm by প্রতি সময়