
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গোলাম কিবরিয়া মজুমদার একসময় সংসদ সবিচালয়ের সাধারণ কর্মচারি ছিলেন। চৌদ্দগ্রাম থেকে নির্বাচিত এমপি মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী হওয়ার পর কিবরিয়াকে তার একান্ত সচিব (পিএস) নিয়োগ দেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কিবরিয়াকে। মন্ত্রীর একান্ত সচিবের পদকে পুঁজি করে রেলের বড় বড় ঠিকাদিারি কাজের কমিশন ও রেলে নিয়োগ বাণিজ্যের দুর্নীতি করে বনে যান শত কোটি টাকার মালিক। রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে কিবরিয়া হয়ে ওঠেন রেলওয়ের ‘কালো বিড়াল’।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কোমরকড়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন আহম্মদ মজুমদারের ছেলে কিবরিয়া ঢাকার বাসাবো থানার সবুজবাগের দক্ষিণগাঁও এলাকায় থাকতেন। তিনি জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর অধীন যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মুজিবুল হক রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে গোলাম কিবরিয়া মজুমদার তাঁর পিএস ছিলেন।
জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করার কাজে নিয়োজিত থাকা আওয়ামী ক্যাডার কিবরিয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান। এরপর সুযোগ বুঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত শনিবার রাতে বিজিবির হাতে আটক হন কিবরিয়া। রবিবার তাকে ঢাকার পল্টন থানার একটি হত্যা মামলা ও কসবা থানার পাসপোর্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায় পুলিশ। বর্তমানে রেলওয়ের এই ‘কালো বিড়াল’ জেলহাজতে বন্দি।
সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের একান্ত সচিব পদে প্রায় আট বছর দায়িত্ব পালন করাকালে রেল মন্ত্রণালয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রকারী হয়ে ওঠেন গোলাম কিবরিয়া। মুজিবুল হকের আশ্রয়ে প্রশয়ে কিবরিয়া এতোটাই ক্ষমতাধর ছিলেন তার সিদ্ধান্তের বাইরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কিছু বলার সাহস ছিল না। মুজিবুল হকের পিএস পদ কিবরিয়ার জন্য ছিল আর্শীবাদ। টানা আট বছরে তিনি অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক বনেছেন। মজুমদার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে রেলওয়ের সঙ্গে চুটিয়ে ব্যবসা করেছেন রেলওয়ের ‘কালো বিড়াল’ খ্যাত গোলাম কিবরিয়া মজুমদার।
জানা গেছে, বিদেশে সম্পদ ছাড়াও কুমিল্লা এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তার একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট ও বহুতল বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে বাসাবো নন্দীপাড়া এলাকায় রয়েছে ছয়তলা বাড়ি। রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে একাধিক প্লট, গুলশানে অন্তত চারটি ফ্ল্যাট এবং একটি আবাসন কোম্পানিতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে কিবরিয়ার অঢেল সম্পদ রয়েছে। এসব নিয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধানের পর প্রতিবেদন পাঠানো হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ দুদকে। কিন্তু এ বিষয়ে দুদক থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ২০১৯ সালে মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী থেকে বাদ পড়লে কিবরিয়া কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ সময় দুদক তার বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধান ফাইল খোলে। পরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।
জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোলাম কিবরিয়া রেলে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ছাড়াও রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) এবং ডিজি নিয়োগে বিপুল অঙ্কের ঘুসবাণিজ্য করেছেন। তার আস্থাভাজন না হলে রেলে ডিজি পদে নিয়োগ পাওয়া ছিল অসম্ভব।