আন্তঃনগর সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে শিক্ষার্থীদের মারধর ও হেনস্তার অভিযোগে কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশনে রেলপথ অবরোধ করে বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
এদিকে এ ঘটনায় ওই ট্রেনে ভ্রাম্যমাণ ট্রেন টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) ও লাকসাম রেলওয়ে জংশনে কর্মরত ভারপ্রাপ্ত জুনিয়র রেলওয়ে পরিদর্শক (জেআরআই) আমিনুল ইসলামসহ তিন টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে বলে জানানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম চৌধুরী।
জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বিরতিহীন ট্রেনটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে লাকসাম জংশনে এলে রেলপথে শুয়ে ট্রেনটিকে আটকে দেন তারা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া হলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর রাত সোয়া ৯টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন। এরপর ট্রেনটি লাকসাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা শেষে বিরতিহীন সোনার বাংলা ট্রেনে ওঠেন। এ সময় তারা ট্রেনের টিকিট কাটার সময় পাননি। পরে তারা বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে পড়েন। একপর্যায়ে টিটিই আমিনুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত জেআরআই) টিকিট চেকিংকালে বিনা টিকিটের ছাত্রদের কাছ থেকে ৪০৫ টাকার স্থলে ৮১০ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে টিটিইর বাগবিতণ্ডা হয়। পরে দুই ছাত্রকে মারধরও করেন টিটিই আমিনুল ইসলাম।
সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টপেজ না থাকলেও সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে লাকসাম জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এ সময় টিটি আমিনুল ১০-১২ জন ছাত্রকে ধাক্কা দিতে দিতে প্ল্যাটফর্মে নামান। এ ঘটনায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে শতাধিক ছাত্র ট্রেনের সামনে শুয়ে পড়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
পরে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা মতিন, রেলওয়ে চট্টগ্রামের ডিআরএম আবুল কালাম চৌধুরী, কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (লাকসাম সার্কেল) মুহিতুল ইসলাম, লাকসাম থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন, লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি জসীম উদ্দীন খন্দকারসহ কর্মকর্তারা দুই দফা বৈঠক করেন। পরে অভিযুক্তদের বিচারের আশ্বাসে এবং টিটিই (ভারপ্রাপ্ত জেআরআই) হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ছাত্ররা অবরোধ তুলে নেন। পরে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টেশন ত্যাগ করে।
সাইফুল আলম নামে এক শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে বলেন, জেআরআই আমিনুল ইসলাম আমাদের সঙ্গে অনেক বাজে ব্যবহার করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। একপর্যায়ে আমাদের একজনকে টেনে-হিঁচড়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে লাকসাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসে নিয়ে আটকে রাখেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে ট্রেনটি আটকে দেন ও রেলপথে শুয়ে পড়েন। এ ছাড়া জেআরআই আমিনুল ইসলামের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তারা। পরে দাবি মেনে নেওয়ায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে বিষয়টি জানতে পেরে লাকসামে যাত্রাবিরতি করেন রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম চৌধুরী। পরে তিনিসহ ঘটনার সমাধানে কাজ করেন।
আবুল কালাম চৌধুরী জানান, শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় লাকসাম রেলওয়ে জংশনের ভারপ্রাপ্ত জেআরআই আমিনুল ইসলামসহ তিন টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।
Last Updated on August 17, 2022 8:11 pm by প্রতি সময়