জ্যৈষ্ঠ মানেই ‘মধুমাস’। আর এ মাসেই পাহাড়ের কাঁঠাল আসে নগরে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধে পাহাড়ের চারপাশ থেকে সুবাস বেরুচ্ছে। বলছি কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ি এলাকার কথা। এই পাহাড়ের বিশাল জায়গা জুড়ে হাজারো কাঁঠালগাছের অস্তিত্ব। গ্রীষ্মের এই মৌসুমে কাঁঠালের ফলন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত লালমাই পাহাড়ি এলাকার হাজারো মানুষের বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
প্রতিবছরই মৌসুমী ফল কাঁঠালের বেশ ভালো ফলন হয়ে থাকে লালমাই পাহাড়ে। এখানকার মাটি কাঁঠাল উৎপাদনের জন্য বেশ উপযুক্ত। আর কাঁঠালও বেশ সুস্বাদু হয়ে থাকে। গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হয়ে থাকে কাঁঠালের ফলন। সমতলে রয়েছে লালমাইয়ের সুমিষ্ট পাহাড়ি কাঁঠালের চাহিদা। মৌসুমের শুরু থেকেই লালমাই পাহাড়ি এলাকার কাঁঠালে ঠাসা কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন হাট-বাজার। কেবল নগরই নয়, কুমিল্লার সর্ববৃহৎ সবজি ও ফলের পাইকারি নিমসার বাজার হয়ে লালমাইয়ের কাঁঠাল যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে।
কুমিল্লা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই পাহাড়। প্রায় ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রস্থের লালমাই পাহাড় এলাকার সদর দক্ষিণ উপজেলার চন্ডিমুড়া, ধর্মপুর, বড় ধর্মপুর, লালমাই সদর, লালমাই সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস, রতনপুর, বিজয়পুর, মধ্যম বিজয়পুর, রাজারখলা, চৌধুরীখলা, জামমুড়া, হাতিগাড়া, সালমানপুর, বার্ড, ফায়ারিং স্কোয়াড ও বিজিবির সেক্টর এরিয়াসহ পাহাড়ের উঁচু-নিচু টিলার চূড়া, ঢাল ও টিলার ফাঁকে-ফাঁকে এবং পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে অসংখ্য কাঁঠালগাছ। মৌসুমের এই সময়ে লালমাই পাহাড়ি অঞ্চলের এই কাঁঠাল বিক্রির ধুম স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে কুমিল্লা নগরেও প্রভাব ফেলেছে। নগরীর মোড়ে মোড়ে লালমাইয়ের পাহাড়ি কাঁঠালের ম ম গন্ধ। স্তরে স্তরে সাজানো নানান আকারের কাঁঠাল। বিক্রেতার হাঁকডাক, চলছে ক্রেতার দামাদামি। আকারভেদে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৪শ’ টাকায়।
নগরের রাজগঞ্জ বাজার পেরিয়ে রাজবাড়ি গেইটসংলগ্ন এলাকায় অনেকেই ভ্যান ও ফুটপাতে বসে কাঁঠাল বিক্রি করছেন। এমন একজন বিক্রেতা কবির হোসেন। তিনি জানান, লালমাই এলাকা থেকে কাঁঠাল এনে এই শহরে বিক্রি করি। বর্তমানে বাজারে জ্যৈষ্ঠ মাসের অনেক পাওয়া যাচ্ছে। ফলের দাম রোদ-বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। বৃষ্টি পড়লে মানুষ কাঁঠাল খেতে চায়, তাই চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়। আবার গরম বেশি পড়লে কাঁঠাল অনেকটাই কম দামে বিক্রি করতে হয়। এখানকার ক্রেতাদের কাছে পাহাড়ি অঞ্চলের কাঁঠাল বেশ পছন্দ।
লালমাই পাহাড় এলাকা জামমুড়ায় কাঁঠাল বাগানের মালিক বাগান জসিম জানান, এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে পাহাড়ে বা ঢালুতে কাঁঠাল বাগান করা হয়। ফল আসার পর পাইকারের কাছে কাঁঠাল বাগান বিক্রি করা হয়। পরে কাঁঠাল পাকার পর ওই পাইকার আরেক পাইকারের কাছে বাগান বিক্রি করেন। কয়েক হাত হয়ে কাঁঠাল বাজারে আসে।
কুমিল্লা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গছে, কুমিল্লার লালমাই পাহাড় এলাকায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়। পাহাড়ে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপন্ন হয়।
জ্যৈষ্ঠ মাসের এই সময়ে কুমিল্লার নগর, গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারের সবচেয়ে বড় জায়গা দখল করেছে পুষ্টিগুণে ভরপুর জাতীয় ফল কাঁঠাল। এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।কাঁঠালে আছে শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে।
Last Updated on May 28, 2024 6:39 pm by প্রতি সময়