নতুন বছর। নতুন উদ্দীপনা। নতুন কর্মযজ্ঞ। ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন ক্লাসে উঠেছে।নতুন বই, নতুন শিক্ষাবর্ষ।
নার্সারি বা প্রাক-প্রাথমিকে ভর্তি হওয়া শিশুদের জন্য শিক্ষালয় যেমন একটি নতুন পরিবেশ তেমনি যারা বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উপরের শ্রেণিতে পা রেখেছে তাদের কাছে নতুন বইয়ের গন্ধ বেশ ভালো লাগলেও এখন থেকেই অর্থাৎ বছরের প্রথম মাস থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সেতুবন্ধনের মাধ্যমে পড়ালেখায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে মনোযোগী হয়ে ওঠতে হবে। আমি মনে করি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্পৃক্ততাই গড়ে তোলে গুণগত শিক্ষার মজবুত ভিত।
আর এক্ষেত্রে আমাদের কী ভূমিকা এ নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
বছরের প্রথম থেকেই হেলা না করে পাঠ্যপুস্তক নিয়মিত অধ্যয়ন করতে হবে। যত রকম যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, রুটিন মাফিক নিয়মিত পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন করতে হবে। তাই বছরের প্রথম থেকেই পড়ালেখায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। স্কুলে আমরা শিক্ষকরা আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় পঠিত বিষয়টি অত্যন্ত সহজভাবে বুঝিয়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। আর সম্মানিত অভিভাবকগণ বাসায় সন্তানের নিয়মিত পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবেন।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ায় আনন্দ পায়। ‘কম পড়া, বার বার পড়া’- এ পদ্ধতির পাঠদান কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই অনুধাবন করতে পারে এবং স্মৃতিতে ধরে রাখতে সক্ষম হয়। কোনো কিছু তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আনন্দের সঙ্গে স্কুলে ও বাসায় পড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। এতে তারা মনের আনন্দে ও নিজের তাগিদেই পড়বে।
পড়ালেখার ফাঁকে বা অবসরে আপনার সন্তানকে পজিটিভ কোনো কাজ বা খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখতে হবে। বিশেষ করে গঠনমূলক ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতেই হবে।আপনার সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েই আপনার দায়িত্ব শেষ নয়, তাকে খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজের চর্চা বাড়াতে হবে। যাতে সে কোনভাবেই একগেয়মীর মধ্যদিয়ে বড় না হয়, এজন্য আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী ও সমাজের ভালো মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
অভিভাবক বিদ্যালয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অভিভাবকের সচেতনতায় বাসায় শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে। তাই প্রত্যেক অভিভাবককে তাঁর বাসার পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বিদ্যালয়ের পাঠদান বাসায় নিয়মানুসারে অধ্যবসায় করার ব্যাপারে অভিভাবকরা বছরের শুরু থেকেই দায়িত্বশীল হবেন।
আপনার শিশুসন্তানকে ধর্মীয়, নৈতিকতা, শিষ্টাচার শেখাতে হবে। যাতে তার আচার–আচরণ সুন্দর হয় এবং সমাজে সবার ভালোবাসা ও সহানুভূতি লাভ করে। আর আমরাতো বিদ্যালয়ে তার এবিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখবোই, সে বাড়ির পরিবেশ থেকে কী শিক্ষা অর্জন করলো।
একজন অভিভাবকের বড় দায়িত্ব সন্তানের শিখন অগ্রগতির খোঁজখবর রাখা। এক্ষেত্রে সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে সন্তানের বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ ও মূল্যায়ন পরীক্ষার অগ্রগতির খোঁজ রাখা। এর ফলে আপনার সন্তান লেখাপড়া ও সৃজনশীল কাজের প্রতি আরও যত্নবান হয়ে ওঠবে।
লেখক :
সিনিয়র শিক্ষক : নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমী, কুমিল্লা
Last Updated on January 24, 2024 2:57 pm by প্রতি সময়