সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মাধ্যমেই একটি জাতির প্রকৃত উন্নয়ন ঘটে এবং মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একটি শিল্প-সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য সংস্কৃতি চর্চার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকী বলেছেন, শিল্প সংস্কৃতি কখনো পরাজিত হয়নি, হবেও না। জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষন ও প্রসারের মাধ্যমে সকল মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির প্রবাহ তৈরি ও দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সামনে কঠিন যুদ্ধ, এ যুদ্ধে সাংস্কতিক যোদ্ধাদের জয়ী হতে হবে। তবে এটাও সত্যি-যুগেযুগে কালেকালে এটা স্বীকৃত যে, শিল্প সংস্কৃতি কখনো পরাজিত হয়নি, কখনো পরাজিত হবেও না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে মৌলবাদী, ধর্মান্ধতা আমাদের সংস্কৃতির ওপর অশুভ প্রভাব ফেলতে এখনো ঘাপটি মেরে আছে। আজকে আমরা একটি শিল্প-সংস্কৃতিবান্ধব সরকারের আন্তরিকতা ও শুভদৃষ্টিতে আছি বলেই শিল্প-সংস্কৃতির মুক্তচর্চা করতে পারছি। আগামির জন্য আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা একটি স্বাধীন শিল্প-সংস্কৃতির বাংলাদেশ চাই কিনা। অনেক ত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বালার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষজনের রক্ত-ঘাম লেগে আছে। আমরা পেছনে ফিরে যেতে চাইনা, আমরা সামনে এগুতে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিল্প-সংস্কৃতিপ্রেমীদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে সবার আগে।
শনিবার (২২ জুলাই) রাত দশটায় কুমিল্লা সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে জেলার শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গণের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে শিল্প- সংস্কৃতিঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির আবেগ কমিটির সদস্য অধ্যাপক হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক। স্বাগত বক্তব্য দেন কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আয়াজ মাবুদ।
এর আগে রাত আটটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শিশু নাট্য কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন লিয়াকত আলী লাকী। এসময় তিনি শিশুদের কয়েকটিভাগে বিভক্ত করে নাট্যকলার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ধারণা দেন। নাট্যকর্মশালায় ১৪০ জন শিশু অংশগ্রহণ করে। পরে লিয়াকত আলী লাকী নাট্য কর্মশালায় অংশ নেওয়া শিশু ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ফটোসেশনে মিলিত হন।
এরপর কুমিল্লা সার্কিট হাউজের সভাকক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকী শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গণের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ কুমিল্লার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নেতৃবৃন্দের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হোন দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রথিতযশা ব্যক্তি, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠক লিয়াকত আলী লাকী। এরপর শিল্প-সংস্কৃতিতে কুমিল্লা এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সংগঠন নেতৃবৃন্দের পক্ষে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক কুমিল্লা নাট্যসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মহড়াকক্ষ সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা এবং শিল্প-সংস্কৃতিকে সংগঠনগুলোর সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে লিয়াকত আলী লাকী আরও বলেন, ১৬ কোটি মানুষের জন্য শিল্প সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কাজ করছে। এই স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে শিল্প-সংস্কৃতির আলো প্রজ্বলন করার মহান দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। চারুকলা প্রদর্শনী, সংগীত, নৃত্য, নাটকের ক্ষেত্রে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান, উৎসব আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতি পিপাসু মানুষকে উজ্জীবিত এবং অনুপ্রাণিত করছে। সংস্কৃতির নানা শাখায় অবিরাম বিচরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কর্মকাণ্ড এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে।
কুমিল্লার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রথিতযশা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিক্ষা,শিল্প,সংস্কৃতিতে কুমিল্লা একটি অগ্রসরমান জেলা। এখানে অনেক গুণি ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন। আবার দেশ-বিদেশের অনেক গুণিজনের পা পড়েছে এই কুমিল্লায়। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির উন্নয়নে আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ। আমরা চাই এই শিল্পকলা একাডেমিকে ঘিরে কুমিল্লার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও বিকশিত হোক। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কুমিল্লার সাংস্কৃতিকযোদ্ধাদের ভূমিকা থাকুক অগ্রগণ্যে।
মতবিনিময় সভায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক জেলা কালচারাল অফিসার বশির উল আনোয়ার, নাট্য সংগঠক শাহজাহান চৌধুরী, নৃপেন্দ্র চক্রবর্তী, কুমিল্লা কালচারাল কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান, অধ্যক্ষ নিখীল রায়, সুলতান শাহরিয়ার, বদরুল হুদা জেনু, নিতীশ সাহা, আবুল কাশেম, সাদিক হোসেন মামুন, খাজা বাহাউদ্দিন, জামাল উদ্দিন দামাল, আজাদ সরকার লিটন, তপন সেনগুপ্ত, অধ্যাপক ফারুক সরকার, অধ্যক্ষ বিধান চন্দ্র দে, মো. বিল্লাল হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মাহাতাব সোহেল।
Last Updated on July 23, 2023 10:25 pm by প্রতি সময়