দেশে এমএলএম-এর নামে পরিচালিত প্রতারণা বাণিজ্যের গডফাদার খ্যাত আইডিয়েল কো-অপারেটিভ লিমিটেড (আইসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচএনএম শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী শামছুন্নাহার মিনাকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বাংলামোটরের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব ৪-এর উপ-অধিনায়ক জানান, গ্রেফতারকৃত আইসিএল এমডি শফিকুর রহমানকে গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে পল্টন থানায় সোপর্দ করা হয়।
পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জানান, বৃহস্পতিবার (২৭মে) দুপুরেই শফিকুর রহমানকে ওয়ারেন্টের বিপরীতে সিএমএম কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত শফিক কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৫নং শুভপুর ইউনিয়নের ধনিজকরা গ্রামের বাসিন্দা সাবিত আলীর ছেলে। এমএলএম বাণিজ্যের নামে হাজার হাজার আমানতকারীর অন্তত সাত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা গেছে।
র্যাব জানায়, ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের ৩২টি জেলায় আইসিএল এর শাখা অফিস খুলে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। গ্রাহকরা লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত নিতে গেলে তাদেরকে হুমকি, আটক করে মারধর এমনকি অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখে উল্টো তাদের কাছেই মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া সংক্রান্ত লিখিত রাখা হতো। এর আগেও অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে শফিকুর রহমান কুমিল্লায় গ্রেফতার হলেও বাদীর জিম্মায় জামিন নিয়েই তিনি সপরিবারে উধাও হয়ে যান।
আদালতের সাজা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে শফিকুর রহমান ঢাকাতেই আত্মগোপনে ছিলেন। সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় নিরাপদে থাকার জন্য তিনি উত্তরা, কাঁঠালবাগান, বনানী, মগবাজার, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী ও মিরপুর এলাকায় নয়টি ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি-বেসরকারি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও প্রবাসী স্বামী, পুত্র কিংবা ভাইয়ের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে অধিক লাভের আশায় এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখেছিলেন। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি, সংসার ভেঙেছে অনেক নারী গ্রাহকের। অনেকেই সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে পেনশনের সমুদয় টাকা শফিকুর রহমানের হাতে তুলে দিয়ে এখন পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। আমানত ও বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে শফিকুর রহমানসহ তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে শতাধিক মামলা করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।
আইসিএল শুধু কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে শাখা স্থাপন করেই গ্রাহকদের কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বেশ কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেন।
কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাধন ভৌমিক জানান, অবসর জীবনে সুখের আশায় ২০১৩ সালে ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানের নগরীর কান্দিরপাড় শাখায় আমানত রাখি। আসল ও মুনাফাসহ আমার ৫৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাওনা। তারা টাকা নিয়ে পালিয়েছে। জেলা সমবায় কার্যালয়ে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। এখন আমি নিঃস্ব।
একই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক মো. জামশেদ ও খোরশেদ আলমসহ অন্তত ১৭ জন আমানতকারী একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন বলে দাবি করেন। সর্বশেষ শফিকুর রহমান পলায়নপর অবস্থায় ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঘাঁটি গেড়ে বসেন এবং একই কৌশলে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান।
বিভিন্ন গ্রাহকের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইসিএল ও এর এমডি শফিকুর রহমানের ব্যাপারে অনুসন্ধানে নামে। দুদকের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিনের প্রাথমিক অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসে আইসিএল-এর ব্যানারে ১২ বছর যাবত ৭০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে সাত সহস্রাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ প্রতারণার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান ছাড়াও অপর ৯ জন পরিচালককে দায়ী করা হয়। পরিচালকরা বেশিরভাগই এমডি’র পরিবারের সদস্য কিংবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক হামিদুল হাসান এক দফা শফিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তীতে হাজিরা দেওয়ার চিঠিও দেন। কিন্তু আত্মগোপনে থাকা শফিকুর রহমান আর কোনো সংস্থার তদন্ত কিংবা চিঠিকে পাত্তা দেননি।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম