কুমিল্লা নগরীর পূর্বাঞ্চলে মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যারা মাদক ও চোরাচালান কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন তাদের ডানহাত হিসেবে এসব কারবার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন নগর যুবলীগের শীর্ষ ক্যাডার, একাধিক হত্যা মামলার আসামি সংরাইশ এলাকার জনু মিয়া। আওয়ামী লীগ ও নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট জনুর একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সীমাহীন অত্যাচার সংরাইশ এলাকার সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পলায়নের পর কুমিল্লার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চিহ্নিত নেতাকর্মী ও ক্যাডাররা আত্মগোপনে চলে গেলেও কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের ক্যাডার ও তিনটি হত্যা মামলার আসামি জনু মিয়া কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর প্রকাশ্যে এসে এলাকায় চাঁদাবাজি ও ত্রাস সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ এলাকার সাধারণ মানুষ গত দুই দিন ধরে জনু ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে ভীতসন্ত্রন্ত হয়ে পড়েছেন। ভুক্তভোগীরা রবিবার রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে ও সন্ত্রাসী জনুর গ্রেফতার দাবী করে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানান, জনু মিয়া চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও যুবলীগের ক্যাডার। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। মাস চারেক আগে সে জামিনে জেল থেকে বের হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সে গা ঢাকা দেয়। ইদানিং এলাকায় ফিরে এসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। রবিবার রাতে সংরাইশের দুইটি বাড়িতে জনু ও তার লোকজন চাঁদার দাবিতে হামলা ও ভাংচুর করেছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে দুটি অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম গিয়েছে, কিন্তু তাকে ও তার বাহিনীর লোকজনকে পায়নি। পুলিশ চিহ্নিত সন্ত্রাসী জনু মিয়াকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুরের শিকার সংরাইশ এলাকার কালু মিয়া ও পাবেল মিয়া জানান, গত ১৫ বছর জনু মিয়া ও তার লোকজন সংরাইশ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই জনু বাহিনী করেনি। হত্যা মামলার আসামি যুবলীগের ক্যাডার জনু জেল থেকে ছাড়া পাবার পর থেকেই এলাকায় ফের চাঁদাবাজি শুরু করে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পালিয়ে যাবার পর জনু তার নেতাদের মতো কয়েকদিন আত্মগোপনে ছিল, কয়েকদিন আগে সে এলাকায় তার বাহিনী নিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। চাঁদা না দেওয়ায় জনু ও তার লোকজন রবিবার বিকেলে বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এঘটনায় রবিবার রাতেই কালু মিয়া ও পাবেল মিয়া কোতয়ালি থানায় দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে জনু এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নগরীর পূর্বাঞ্চলে মাদক ও চোরাচালান কারবার পরিচালনা করতো জনু মিয়া। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে। ২০১৫ সালে কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ এলাকায় মো. সহিদ মিয়া নামের এক বাসের হেলপারকে কুপিয়ে হত্যা মামলার আসামি জনু মিয়া। ২০০৩ সালে সংরাইশ এলাকায় মুহিন নামে এক যুবক হত্যা মামলার প্রধান আসামি জনু মিয়া। এছাড়াও ২০২০ সালের মার্চ মাসে কুমিল্লা নগরীর চকবাজারের ব্যবসায়ি ও বৃহত্তর সংরাইশ টিক্কাচর সমাজ কল্যাণ পরিষদের সর্দার আব্দুল মতিন হত্যা মামলারও আসামি এই জনু। নগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা ছিলেন জনুর গডফাদার।
Last Updated on September 2, 2024 7:35 pm by প্রতি সময়