ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ও এর বাইরে প্রায় পৌনে তিনশো খাবার হোটেল ব্যবসায়িকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। মহামারি করোনাভাইরাম সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় খাবার হোটেলগুলোতে নিয়োজিত প্রায় ২৫ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা আর্থিক কষ্টে পড়েছেন।
লকডাউনে হোটেল রেস্তোরা থেকে কেবলমাত্র খাবার পার্সেলের অনুমতি থাকলেও মহাসড়ক এলাকার হোটেলগুলোর কাস্টমার সাধারণত পরিবহন যাত্রীরাই। এখানে খাবার পাসের্লের জন্য হোটেলগুলো খুলে রেখে লোকসান গুণতে হবে। তাই হোটেরগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে সবধরণের সার্ভিস বন্ধ থাকার পরও দৈনিক বেতনভিত্তিক হোটেলের কর্মচারি ও দারোয়ানদের ধরে রাখার জন্য তাদের থাকা-খাওয়াসহ বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে মালিকদের। লকডাউনে মহাসড়ক এলাকার কেবল খাবার হোটেলই নয়, আবাসিক হোটেলগুলোরও করুণদশা। গেষ্ট না থাকায় তাদেরও প্রতিদিন লোকসান গুণতে হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অপেক্ষাকৃত মাঝামাঝি স্থানে থাকা কুমিল্লার বিভিন্ন অংশে মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে শত শত হোটেল, রেষ্টুরেণ্ট, ফাষ্টফুডসহ মিষ্টির দোকান। এসব দোকানে প্রতিদিনই যাত্রাপথে খাওয়া বা বিশ্রামের জন্য ভীড় করেন যানবাহনের যাত্রীরা। আর দিনে দিনে ব্যস্ত হয়ে উঠা এসব হোটেল রেষ্টুরেন্টে কাজ করছে হাজারো শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা
সম্প্রতি সারাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে সরকার জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ এপ্রিল প্রথম দফায় এক সাপ্তাহের লকডাউন দেয় সরকার। পরবর্তীতে ১৪ এপ্রিল থেকে আবারো কঠোর লকডাউন ঘোষনায় মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে সবগুলো হোটেল, রেষ্টুরেষ্ট, ফাষ্টফুডসহ খাবার হোটেলগুলো। ফলে গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট মহাসড়কের পাশের হোটেলগুলোতেও স্থবিরতা নেমে আসে ।
দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ হাজারেরও বেশী দুরপাল্লার বাসসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করে। কুমিল্লায় মহাসড়কে রয়েছে প্রায় ১’শ কিলোমিটার অংশ।মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীদের সাময়িক বিশ্রামসহ আপ্যায়নের জন্য কুমিল্লা অংশের চৌদ্দগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় পৌনে তিনশো বভিন্ন মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট। প্রতিদিন সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা এই সকল হোটেল-রেস্টুরেন্টে সাময়িক যাত্রা বিরতী করে। এই সকল হোটেলগুলোতে রয়েছে কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক।
হোটেলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- হাইওয়ে ইন, গ্রীণভিউ, তাজমহল, নুরজাহান, ছন্দু হোটেল মিয়ামি, ভিটা ওয়ার্ল্ড, ডলি রিসোর্ট, টাইম স্কয়ার, ব্লু ডায়মন্ড, বিরতী, মিয়ামী, কাকলী, কফি হাউজ, জিহান প্রভৃতি ।প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসকল হোটেলে থাকে যানবাহনের যাত্রীদের উপচেপড়া ভীড়। পাশাপাশি দেশের বিলাস বহুল পরিবহনের বাসগুলো যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে হোটেলগুলোতে তাদের নিজস্ব কাউন্টারও চালু করেছে। এর ফলে হোটেলগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রতিদিন বিশাল কর্মযজ্ঞ আর কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। সাথে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান।
২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রথমদফা ধাক্কার পর হোটেল মালিকরা আবারো ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিল,ঠিক তখনই চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে আবারো দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের সাথে গণপরিবহন বন্ধের ঘোষনায় থমকে গেছে এসব হোটেলের কর্মযজ্ঞ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়া কর্মচারীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ব্যবসা না থাকায় প্রতিদিন বিপুল অংকের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মালিকপক্ষ। এছাড়াও বহু হোটেল ভাড়ায় পরিচালিত হওয়ায় অনেক হোটেল মালিকপক্ষ লোকসানের কবলে পড়ে ব্যবসা বন্ধের চিন্তাও করছে।
মহাসড়কের পাশে সদর উপজেলার আমতলী এলাকার হোটেল ব্লু ডায়মণ্ডের মালিক মোক্তার হোসেন বলেন,বাস বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই লস গুনতে হচ্ছে। একই হোটেল সুমন, জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিদিন কাস্টমারদের কাছ থেকেই ৪/৫’শ টাকা করে বখশিস পেলেও এখন তো আর এটা পাওয়া যাবে না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। বেঁচে থাকার জন্য করোনাকালে সরকারি অনুদান প্রণোদনা চাই।
হাইওয়ে হোটেল মালিক সমিতির সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মোঃ মিজানুর রহমান জানান, আমার সমিতির নিবন্ধনকৃত হোটেল মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে রয়েছে ৪৮টি,এরবাইরে আরো ২২৫টি রেজিষ্টার্ড হোটেল, ফাষ্টফুড,মিষ্টির দোকান রয়েছে। যেগুলোতে কমপক্ষে ২৫ হাজারেরও বেশী শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতো। এছাড়াও দুরপাল্লার গাড়িগুলোর চালক, সুপারভাইজারসহ অন্যান্য ষ্টাফদের পরিবর্তন করা হয় এখানেই। লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকায় তাই সবকিছুই এলোমেলো। এ অবস্থায় আমি শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম