হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ এই সময়ের অন্যতম লাইফস্টাইল ডিজিজ। হাইপার টেনশনকে ‘দ্য সাইলেন্ট কিলারবা নীরব ঘাতক বলে থাকেন চিকিত্সকরা। ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লিগের সদস্য হিসেবে হাইপারটেনশন কমিটি অব ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ২০০৬ সাল থেকে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করে আসছে।প্রতি বছর এই সমস্যায় দেশে ২.৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে ১৭ মে বিশ্ব হাইপার টেনশন দিবস ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে না।
অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘প্রতিসময়’ এর পাঠকের জন্য হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ প্রসঙ্গে লিখেছেন ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজী থেকে ফেলোশিপ প্রাপ্ত চিকিৎসক ও হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন কুমিল্লা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ।
‘উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের অনন্য ঝুঁকির মুখে নারী’
আজ ১৭ মে, বিশ্ব হাইপারটেনশন দিবস। এবছরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘আপনার রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণ করুন, বেশীদিন বাঁচুন’।
উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ এবং আমরা জানি যে, প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন মহিলার স্ট্রোক হয় এবং এই স্ট্রোকের কারণে নারী মৃত্যুর হার স্তন ক্যান্সারে মুত্যুর চেয়েও বেশি।
মহিলারা একটি পরিবার এবং সংসারের প্রান। নারীকে ঘিরেই সংসার আবর্তিত হয় তাই পরিবার এবং অন্যান্য বাধ্যবাধকতার জন্য প্রায়শই তাদের নিজের প্রতি যত্ন বা খেয়াল রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণকাজটি পিছনে ফেলে রাখতে হয়। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলার উচ্চ রক্তচাপ আছে এবং এর প্রায় তিন-চতুর্থাংশই তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন না। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ নারীর স্ট্রোকের জন্য ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সেই ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং মহিলাদের ও তাদের প্রিয়জনদের চিন্তামুক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। যদিও লিঙ্গভেদের সাথে উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তবে একজন নারীর জীবনজুড়ে নানাবিধ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় রেখে দিলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
চিকিৎসক এবং গবেষকরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি এবং কিছু নারীর রক্তচাপ বৃদ্ধির মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছেন যে, ইতিমধ্যে যাদের ওবেসিটি অর্থাৎ স্থুলতা, কিডনির রোগ বা উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি এবং ধূমপানের সংমিশ্রণ মহিলাদের জন্য খুব বিপজ্জনক হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার স্বাস্থ্য ভবিষ্যতে তার স্বাস্থ্যের প্রাকদর্শন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় যেসব মহিলার উচ্চ রক্তচাপ ছিল তাদের পরে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার এবং পরবর্তী জীবনে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। মেনোপজের সাথে যুক্ত শারীরিক পরিবর্তনগুলিও একজন মহিলার উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র- সিডিসি’র অনুসারে লক্ষণীয় যে, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক জাতিগোষ্ঠীর মহিলাদের অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় রক্তচাপ বেশী থাকতে পারে। তবে আশার কথা হলো, শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং আমরা জানি, রক্তচাপ কমানোর ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়। মহিলারা বাড়িতে রক্তচাপ নিয়মিত মাপতে পারেন এবং এটি সাধারণত ১২০/৮০ এর উপরে থাকলে তাদের চিকিৎসকদের তা জানানো উচিৎ।
এছাড়াও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা এবং ধূমপান না করার মাধ্যমে লাইফস্টাইল বা জীবনধারা পরিবর্তন করে উচ্চ রক্তচাপের কারণে নারীরা নানা প্রানঘাতি রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম