বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মকবুল হোসেন চৌধুরীর বয়স শতকের ঘরে দাঁড়িয়েছে। জীবন সায়াহ্নে এসে শতবর্ষী এ বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য একটি স্মরণীয় সম্মান চান তার পরিবারের সদস্যরা।আর এ চাওয়া-পাওয়া হচ্ছে-ব্রাহ্মণপাড়া রানীগাছ গ্রামের একটি সড়ক যেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা হয়।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার রানীগাছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করা মকবুল হোসেন ১৯৫১ সালে পুলিশ বাহিনী ও ১৯৫৮ সালে ইপিআরে যোগ দেন। ১৯৫২ সালে তিনি ভাষা আণ্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে দেশ মাতৃকার রক্ষার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
দেশ স্বাধীনের পর বিডিআরের হাবিলদার পদে থেকে ১৯৭৫ সালে অবসরে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন চৌধুরী।বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের বয়স একশ বছর।১২ সন্তানের মধ্যে ৮জন বেঁচে আছেন। তারা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।নাতি-নাতনিরাও যে যার মতো ভাল অবস্থানে আছে। অবসর জীবনে এসে নিজের গ্রামে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছেন। সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন রানীগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
বয়সের ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন।এখনও দেশের কথা ভাবেন।ভাষা আণ্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান নাতি-নাতনিসহ গ্রামের যারাই বাড়িতে আসে তাদেরকে।বয়সের শেষ প্রান্তে এসে নিজের চাওয়া পাওয়া নিয়ে বললেন- দেশের প্রতি আমার ভালোবাসাটা অনেক বেশি।মাকে হারিয়েছি সেই কবে।এখন এই গ্রামের মাটি আমার মা।এখানেই আমার শেষ ঠিকানা।
মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের সন্তানরা জানালেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে একটাই চাওয়া- জীবদ্দশায় যেন তাদের বাবা নিজের একটা সম্মান দেখে যেতে পারেন। আর এটা হচ্ছে- ব্রাহ্মণপাড়ার রানীগাছ দোকানের মোড় থেকে চৌধুরী বাড়ী হয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটি যেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন চৌধুরী সড়ক’ নামে নামকরণ করা হয়। তাদের বাবারও স্বপ্ন গ্রামের একটি সড়ক তার নামে নামকরণ করা হোক। এটা শতবর্ষী জীবিত একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য অনেক বড় সম্মানের।যিনি দেখে যেতে পারলেন এ সম্মান।
পরিবারের লোকজন ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এব্যাপারে আবেদন জমা দিয়েছেন। এখন তাদের প্রত্যাশা এ আবেদন বাস্তবায়ন হলে একজন মুক্তিযোদ্ধা জীবন সায়াহ্নে তার সম্মানিত হওয়ার দৃশ্য দেখে যেতে পারবেন। আর এ সম্মান যুগ যুগ একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণ করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ নির্দেশনা দিয়ে ডিসি ও ইউএনওদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন রাস্তাঘাট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করার জন্য সব উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং জেলা প্রশাসকদের পত্র দিয়ে জানিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। গত বছরের ২৮ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা অফিস আদেশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় নির্মিত সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ সংক্রান্ত আবেদন/প্রস্তাব যাচাই-বাছাইক্রমে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (উন্নয়ন) সভাপতিত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এমতাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৩তম বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে সব জেলা/উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিসি ও ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন ভিডিও নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম