স্বাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাঅধিদফতর, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ-কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিসহ দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক কর কমিশনার কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল গ্রামের এস এম জাহাঙ্গীর আলম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি- এমন মতামত দেওয়ার পরও ‘মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার’ জাহাঙ্গীর আলম নিজের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় ধরে রাখতে তদন্ত আদালতে বার বার সময় চেয়ে দিন মাস বছর গড়াচ্ছেন। তদন্ত আদালতে বার বার সময় চাওয়ার নামে জাহাঙ্গীর আলম ছলচাতুরির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খন্ডনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছেন বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দাবীদার’ (লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ৭১১, গেজেট নম্বর ৫৯৯২) এস এম জাহাঙ্গীর আলমের নাম গেজেট থেকে বাদ দেয়া, লাল মুক্তিবার্তা ও সনদ বাতিল এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় ও জামুকায় সুপারিশপত্রসহ দাবী জানিয়েছেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার ও কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
চাকরি জীবনে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পদোন্নতি পাবার বিষয়টি ঘিরেই জাহাঙ্গীর আলম আলোচনায় উঠে আসেন। আর তখনই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ উঠে। ২০০২ সালের ১ জুলাই ওই অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য চিঠি পাঠানো হয় কুমিল্লার তৎকালিন জেলা প্রশাসক তারিক-উল-ইসলামের কাছে। শুরু হয় তদন্ত।জেলা প্রশাসক তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে জাহাঙ্গীর আলম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে স্মারকপত্রের মাধ্যমে অবহিত করেন।
এছাড়াও ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির পাঠানো প্রতিবেদনে তদন্ত আদালত মতামতে উল্লেখ করেন- এস এম জাহাঙ্গীর আলম মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করলেও তার নাম মুজিবনগর সরকারের কর্মচারি তালিকায় ছিল না। প্রতিবেদনে তদন্ত আদালতের সুপারিশে বলা হয়েছে- জাহাঙ্গীর আলম যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা নন, তাই তার নামে প্রকাশিত গেজেট, লাল মুক্তিবার্তার নম্বর ও গৃহীত সার্টিফিকেট বাতিল করা যেতে পারে এবং প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে চাকরির সুবিধা গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
এদিকে চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহা-পরিচালক বরবার জাহাঙ্গীর আলমকে (লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ৭১১, গেজেট নম্বর ৫৯৯২) অতিমাত্রার বিতর্কিত ব্যক্তি ও অমুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে তার মুক্তিযোদ্ধার সনদসহ গেজেট থেকে নাম বাতিল করার সুপারিশ করেন।
এছাড়াও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর জাহাঙ্গীর আলমের নাম গেজেট থেকে বাদ দেয়া, গৃহিত সনদ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ। মন্ত্রী বরাবর আবেদনে তারা উল্লেখ করেন- জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন সময়ের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করতে সমর্থ হন এবং সনদ সংগ্রহ করেন। চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। অবসরে এসেও ভোগ করছেন মুক্তিযোদ্ধার সকল সুযোগ-সুবিধা। জাহাঙ্গীর আলম অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আনিত ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ খন্ডনের প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে তিনি কেবল আইনের আশ্রয় নিয়ে সময় ক্ষেপন করছেন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম