দুবাইভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এমটিএফই) ছিল লোভনীয় অফার। শরীয়াহ-সম্মত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে এতে বিনিয়োগ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ও বিভিন্ন পণ্য কিনে লাভবান হওয়ার প্রলোভন দেখানো হয় সাধারণ মানুষদের।
লোভে পড়ে বিনিয়োগের নামে বাংলাদেশের উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ের কয়েক হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা চলে যায় এমটিএফইতে।
গত ১৭ আগস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা হয়েছেন প্রতারিত। এখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এমটিএফই নামের অ্যাপসের খপ্পরে পড়ে কয়েক শত যুবক খুঁইয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ব্রাহ্মণপাড়ার এসব যুবকদের এমটিএফই নামের অ্যাপসের ফাঁদে ফেলেছেন স্থানীয় দুই কলেজ শিক্ষক। এমন অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত যুবকদের।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই অ্যাপের স্থানীয় টিম লিডারদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেও বিনিয়োগের টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো টিম লিডাররা বলছেন, সব ব্যবসায় লাভ-লোকসান রয়েছে। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। আরও বেশি করে বিনিয়োগ করতে হবে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার জন্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রথমে এই অ্যাপটিতে যুক্ত হওয়ার জন্য ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব নেন স্থানীয় মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের শিক্ষক আরিফ। পরে এই অ্যাপের টিম লিডার হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন একই কলেজের শিক্ষক সুমন রানাকে। মূলত আরিফের নেতৃত্বে এমটিএফইতে কাজ করে সংঘবদ্ধ চক্র। এই প্রতারকচক্রটি গ্রাহকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নানা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে অ্যাপটি পরিচালনা করত। শুরুতে উপজেলার সদরের যুবসমাজের মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের ঝড় তুলেছিল। কোনো কাজ না করে রাতারাতি ধনী হওয়ার মোহে যুবকরা একের পর এক অ্যাকাউন্ট খুলতে থাকে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ‘আমরা এই অ্যাপস সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমাদেরকে এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচয় করায় মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের শিক্ষক মো. আরিফ ও সুমন রানা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সভা-সেমিনার করে আমাদেরকে লোভনীয় অফার দেখায়। বেশি অ্যাকাউন্ট করলে বেশি লাভ হয় এবং রেফার করলে আরো বেশি ডলার ইনকাম করা যায়। এছাড়া ১শ’ জনকে অ্যাকাউন্ট রেফার করলে কোম্পানির সিইও হওয়া যায়। তখন তাকে মাসিক বেতন বোনাসসহ আরো অনেক অফার দেয়। এসব লোভনীয় অফার দেখে অ্যাকাউন্ট করতে থাকি। তারা তখন জানায়, এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা লাভ থাকবে।
তবে প্রতিমাসে একবার লোকসান হবে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। তাদের কথামতো এই অ্যাপে বিনিয়োগ করি লাখ টাকা। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আমাদের ব্যালেন্স শূন্য হয়ে যায়।
আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত যুবকরা, ওই অ্যাপের সঙ্গে জড়িত প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম