# ছবি দুলালের পরিবার থেকে সংগৃহিত।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের মোকাম গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে দুলাল (৩৭)।প্রায় ৮ বছর যাবত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে একটি কোম্পানীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।৮ বছরে সে বাংলাদেশে আসেনি।দেশের বাড়ির লোকজনের পারিবারিক অবস্থা সচ্ছল থাকার কারণে কেবল ঈদের সময় বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাত।আর রোজগারের সব টাকাই সেখানে জমা করতো। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই একেবারে দেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।কিন্তু দেশে আর ফেরা হলোনা দুলালের।
গত ৮ নভেম্বর ওমানের ইবরাতে তার কক্ষের বাইরে একটি জানালার পাইপে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো এবং মাটিতে দুই পা স্পর্শ করা অবস্থায় দুলালের মৃতদেহ উদ্ধার করে ওমান পুলিশ। ছবিতে দেখা গেছে, দুলাল যেন দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার এক পায়ে জুতা রয়েছে, আরেকটি জুতা একটু সামনে উল্টে পড়ে আছে। দুলালের এ ছবি কেউ দেখলে কোনভাবেই বিশ্বাস করবে না, এটা আত্মহত্যা! যেমনি বিশ্বাস করছেন না, তার পরিবার। তাদের দাবী তার দীঘদিনের উপার্জিত ও সঞ্চিত অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে দুলালকে কেউ হত্যা করে সহজেই তার কক্ষের পাশে সাধারণভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। দুলালের বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাই দুলালের মৃত্যর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন।
নিহত দুলালের পরিবার জানায়, ২০১২ সালের শেষ দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে যায়। সেখানে আল মোবারক নামের একটি কোম্পানীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। কোম্পানীটি ওমানের সালালা শহরে অবস্থিত। তবে কোম্পানীর শ্রমিকরা থাকতো ইবরা নামের অন্য একটি শহরে। সেখানে একটি কক্ষে দুলালসহ ৮জন বাঙালি বসবাস করতো। কাজের প্রয়োজনে কোম্পানী তাদের পুরো ওমানের বিভিন্ন শহরে পাঠাতো।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনার প্রভাবে তারা ৮ জন অনেকটা আইসোলেশনের মতোই কক্ষে থাকতো। দুলালের সহকর্মী কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বাতাইছড়ি এলাকার আবুল কালাম মোবাইল ফোনে জানায়, প্রতিদিনের মতো গত ৮ নভেম্বর ওমানের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বেশ কিছুু সময় পরে পাশের কক্ষের এক নাইজেরিয়ান শ্রমিকের চিৎকারে সবাই বাইরে গিয়ে দেখে দুলালের লাশ কক্ষের বাইরের জানালার পাইপের সাথে গামছা দিয়ে ঝুলানো। তবে তার দুই পা মাটিতে লাগানো ছিল।
ঘটনাটি কোম্পানীর লোক মারফত পুলিশ খবর পেয়ে ৫/১০মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ দুলালের কক্ষের বাকী ৭ জন বাংলাদেশী ও পাশের একটি কক্ষের ৪ পাকিস্তানি শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একই সময় প্রথম দেখা নাইজেরিয়ান ও কোম্পানীর একজন সুপারভাইজারকে থানায় নিয়ে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ,স্বাক্ষর ও আকামা জব্দ রেখে ছেড়ে দেয়। দুলালের সাথে কারো কোন ঝগড়া, লেনদেন বা শত্রুতাও ছিলনা বলে ফোনে জানায় দুলালের সহকর্র্মী আবুল কালাম।
নিহত দুলালের বড় ভাই আওয়াল হোসেন জানান, ঘটনার পর সে দুলালের কোম্পানীর মালিকের সাথে মোবাইলে কথা বলেছেন। ওই মালিক জানিয়েছেন,পুলিশ তাকে (কোম্পানীর মালিক) জানিয়েছে দুলাল আত্মহত্যা করেছে। তবে কেন সে আত্মহত্যা করেছে সেটা সে জানেন না। মালিক আরো বলেছেন,যত দ্রুত সম্ভব দুলালের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
দুলালের বড় ভাই আওয়ালসহ তার বাবা ফরিদ মিয়ার দাবী, অর্থের লোভেই দুলালকে কেউ হত্যা করতে পারে। যেভাবে লাশের পা মাটিতে লেগে আছে তাতে একটি মানুষ ফাঁসিতে না ঝুলে মরতে পারেনা। কেউ তাকে মেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে।
নিহত দুলালের পরিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে ওমানের বাংলাদেশী দুতাবাসের সহযোগিতায় সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দুলালের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবী এবং দ্রুত দুলালের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিন। এছাড়া protisomoy ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ও বেলবাটন ক্লিক করে নতুন নতুন ভিডিও নিউজ পেতে অ্যাকটিভ থাকুন।
Last Updated on December 4, 2020 7:25 pm by প্রতি সময়