বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো হেরিটেজ ট্যুর শুরু করেছেন ভ্রমণকন্যা ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী।এরই অংশ হিসেবে কয়েকদিন আগে তিনি কুমিল্লার ঐতিহাসিক বেশ কিছু স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।এরমধ্যে প্রায় ১২৮ বছরের পুরানো লাকসাম জংশন নিয়ে তার ফেসবুক পেইজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।সাথে যুক্ত করেছেন বেশ কিছু ছবি।অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘প্রতিসময়’ এর বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগে দ্বিতীয়বারের মতো ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা কুমিল্লা ঘুরে যাওয়া এলিজা বিনতে এলাহীর লেখাটুকু প্রকাশ করা হলো।
কত লাকসাম কত বাত্তি !
।।এলিজা বিনতে এলাহী।।
প্রায় ৩০০ একর সম্পত্তির উপর ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।এই স্টেশনে বর্তমানে বিরাট স্টেশন ভবনসহ ৪টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। বাংলাদেশে ৫টি বৃহত্তম জংশনের মধ্যে এটি একটি।
শত বছরের এই রেল স্টেশনে খুঁজে বেরাচ্ছিলাম পুরানো ভবন গুলো কেমন অবস্থায় রয়েছে।খুব বেশি পুরোনো ভবনের অস্তিত্ব নেই। রেল স্টেশন অভ্যন্তরে পুরোনো ভবনের ৩/৪টি রয়েছে।স্টেশনের বাইরে বিভিন্ন কোয়ার্টার, ক্লাব ঘর রয়েছে, তবে বেশ নাজুক অবস্থায়।
লাকসাম কুমিল্লার একটি প্রাচীন উপজেলার নাম।লাকসামের নামের সাথে এই প্রবাদবাক্যটি ওতপ্রতভাবে জড়িত। এ প্রবাদবাক্য লাকসামের ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশনকে ঘিরে।
তবে সেই জংশনে এখন আগের মতো আর বাতি জ্বলে না।'কত লাকসাম-কত বাত্তির' উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নানা গল্প। স্থানীয়রা বলেন, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিণের একাংশ নিয়ে ছিল তৎকালীন বৃহত্তর লাকসাম।তখন এ এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি।রেলওয়ে লাকসাম জংশনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাওয়ার হাউজের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করত।এ বিদ্যুতের মাধ্যমে স্টেশনসহ আবাসিক এলাকায় বাতি জ্বলত।
গ্রামের লোকজনের কাছে বৈদ্যুতিক বাতি ছিল একটি আশ্চর্য বিষয়।জংশনের চারদিকে তখনও শহর গড়ে উঠেনি।দূরের গ্রাম থেকেও রাতে বাতির বহর চোখে পড়ত।গ্রামের মানুষ নাকি ভয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে চলে যেত।তারা ট্রেনকে ভয়ংকর কিছু মনে করতো। এলাকায় ট্রেন বন্ধের জন্য জনমতও নাকি একসনয় গড়ে উঠে।
ব্রিটিশ তথা পরবর্তী পাকিস্তান আমলে এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল ট্রেন।লাকসাম জংশন সবসময় উৎসবমুখর ছিল।প্রথমে লাকসাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত রেললাইন চালু ছিল।পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর রেল রুট চালু হয়।
হারিকেন আর কুপি দেখা অভ্যস্ত জনপদ বাতি জ্বালানো দেখে বিস্মিত হয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দিল 'লাকসামে কত বাত্তি জ্বলেরে'।তা ধীরে ধীরে 'কত লাকসাম-কত বাত্তিতে' রূপান্তরিত হয়।
একসময় এই জংশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ছিল ১৭০০ জন। এখন সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০ তে।স্টেশনে নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে কিন্তু শত বছরের রেল স্টেশনের ঐতিহ্য ধরে রাখা প্রয়োজন।
# দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে প্রতিসময় (protisomoy) ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।
সম্পাদকঃ শাহজাহান চৌধুরী
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সাদিক হোসেন মামুন
কপি রাইটসঃ প্রতিসময় ডটকম